১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,বিকাল ৪:১১

একাত্তরের ২৫ মা‌র্চ রা‌তের হত্যাযজ্ঞের স্বীকৃতি দিল আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২

  • শেয়ার করুন

বিশ্বে গণহত্যা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জেনোসাইড ওয়াচ’ একাত্তরে বাংলাদেশিদের ওপরে পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড বা গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের ওই বর্বরতার ৫০ বছর পূর্তিতে জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জর্জ এইচ স্ট্যানটন বৃহস্পতিবার তাদের ওয়েবসাইটে এ ঘোষণা দেন।

পাকিস্তানিদের শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সেখানে বলা হয়, জেনোসাইড ওয়াচ এই স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙালিদের ওপর যেসব অপরাধ করেছে, তার মধ্যে ছিল ‘জোনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’।

এর মধ্য দিয়ে একাত্তরের পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রেও গণহত্যার স্বীকৃতি পেল এবং এর মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথ সুগম হলো।

সেসব অপরাধ ও জেনোসাইডের ঘটনাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকার করে নিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানিয়েছে জেনোসাইড ওয়াচ।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তানসহ জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর করা সেসব অপরাধকে ‘জোনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে স্বীকার করে নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাশাপাশি সেই জেনোসাইডে নেতৃত্বদাতাদের মধ্যে যারা এখনও জীবিত, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে জেনোসাইড ওয়াচের ঘোষণায়।

একাত্তরের জেনোসাইডের ক্ষেত্রে ৫০ বছর পর এ ধরনের স্বীকৃতি একাত্তরের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের পথকে আরও সুগম করে তুলেছে। বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান এসেছে সেখানে।

শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেনের ছেলে তৌহিদ রেজা নূর এই স্বীকৃতির জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে জেনোসাইড ওয়াচের কাছে আবেদন করেছিলেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই এ স্বীকৃতি এলো।

তৌহিদ রেজা নূর তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমি খুবই আনন্দিত। এ স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষের জন্য এক বিশাল অর্জন ও প্রাপ্তি।

তৌহিদ রেজা নূর বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত জেনোসাইডের এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের জাতির জন্য একটি বড় অর্জন। এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একাত্তরের পাকিস্তানিদের হত্যাযজ্ঞ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পথযাত্রায় আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করেন তিনি।

কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা আসলে হুট করে এ ধরনের স্বীকৃতি দেয় না, অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পরে তারা এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। এজন্য নিয়মিত সংস্থাটি আমার সাথে যোগাযোগ করেছে, তাদের নানা ধরনের ম্যাটেরিয়াল, ডকুমেন্ট দিতে হয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ‘লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন’ একাত্তরে বাংলাদেশিদের উপরে পাকিস্তানিদের নির্মম হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ বা ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান; শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব।

নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন