২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,রাত ১১:৪৪

কয়রায় আশ্রয়ন প্রকল্পের জমি ক্রয়ে নানা অভিযোগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৩

  • শেয়ার করুন

কয়রা প্রতিনিধি : মুজিব শতবর্ষে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের জমি ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য ক্রয় কৃত ১৫০ শতক জমির রোপন কৃত আমন ফসলসহ কৃষি জমি ভরাট করতে কপতক্ষের ভাঙ্গন কবলিত স্থানে পাইপ লাগিয়ে লবণ-বালু উত্তোলনের চেষ্টা চালানো হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের জন্য গত ২৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে কয়রা সাব রেজিস্ট্রী অফিস থেকে ১৬৬১/২৩ নং দলিলের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আশ্রয়ন প্রকল্প ক্রয় কমিটির সভাপতি, উপজেলা সদরের মদিনাবাদ মৌজার দক্ষিণ মদিনাবাদ বিলে স্থানীয় নাসির উদ্দিন এর নিকট থেকে ৪৮ হাজার টাকা শতক দরে ৭২ লক্ষ্য টাকায় ১৫০ শতক কৃষি ফসলি জমি জেলা প্রশাসকের নামে ক্রয় করেন। জমি ক্রয়ে রেজিস্ট্রি খরচ সহ ব্যায় হয়েছে প্রায় ৭৭ লক্ষ টাকা। যা স্থানীয় মূল্যের তিনগুণ ও সরকারী মূল্যের দ্বিগুণ হওয়ায় নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ তসরূপের অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া উপজেলায় বিপুল পরিমাণ খাস জমি থাকা সত্ত্বেও বাজার দর উপেক্ষা করে দ্বিগুন টাকা দিয়ে ভূমি হীনদের আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্য ধানি জমি ক্রয়ের ব্যাপারে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার দক্ষিণ মদিনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা কহিনুর আলম বলেন, কয়েক মাস আগে ২৪ হাজার টাকা শতক দরে দক্ষিণ মদিনাবাদ বিলে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত আমার বোনের সাড়ে ১৬ শতক জমি চার লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছি জমিটি বসতবাড়ি করার উপযোগী ও রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় সর্বোচ্চ দাম পেয়েছি এই হিসাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের ক্রয়কৃত জমি বিলের মাঝখানে সেই হিসাবে ওই জমির প্রকৃত মূল্য শতক প্রতি ১৫ থেকে থেকে সর্বোচ্চ ১৭ হাজারের বেশি হবে না। সেই হিসাবে ক্রয় কৃত ১৫০ শতক জমির মূল্য দাঁড়ায় ২৫ লক্ষ টাকা। সাবরেজিস্ট্রি অফিস কয়রা প্রাপ্ত তথ্যে ২০২২-২৩ সালের সর্বশেষ মৌজা রেট অনুযায়ী মদিনাবাদ মৌজার বিলান শ্রেণীর জমির শতক প্রতি মূল্য ২৬ হাজার টাকা দরে ক্রয় করলেও ১৫০ শতক জমির মূল্য দাঁড়ায় ৩৯ লক্ষ টাকা। কিন্তু নির্বাহী অফিসার ৪৮ হাজার টাকা শতক দেখিয়ে ৭২ লক্ষ টাকায় ওই জমি ক্রয় করেছেন যা স্থানীয় দরের তিনগুণ ও সরকারি দরের দ্বিগুণ।
নীতিমালা অনুযায়ী ক্রস চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধের বিধান থাকলেও জমির মালিকের সাথে যোগসাজসে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে বসে নগদ টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে কয়রা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল নেতা এই দুই আত্মীয়র মাধ্যমে জমি ক্রয়ের লেনদেন সহ ইউএন এর সকল প্রকল্পের দেখাশুনার নামে রাস্ট্রীয় অর্থ লুটপাট করা হয়েছে।
এদিকে, আশ্রয়ন প্রকল্পের জমি ক্রয়সহ আরো কয়েকটি আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয়সহ ইউ এন ও এর বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাঝে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ০৫ ০০ ০০০০ ১৪০ ১৯ ০০৫ ২২ ৪২২ নং স্মারকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমিনুর রহমানকে পদায়ন দিয়ে নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হলেও কর্মস্থলে যাননি।
জমি ক্রয় কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি অফিসার অসীম কুমার দাস বলেন কৃষি জমি ভরাট করে আশ্রায়ণ প্রকল্প করার কোন সুযোগ নেই।
জমি সংস্থান কমিটির সদস্য কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, আমি এই কমিটির সদস্য আমি নিজেও জানি না। কিছুদিন আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার অফিসের পিয়নের মাধ্যমে আমার স্বাক্ষর নীতে আমার বাসায় কিছু কাগজ পাঠায় বিষয়টি আমি মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন তুমি সই করে দাও সকল বিষয় পরে তোমাকে জানাবো।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো: তারিক উজ-জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই আমি এখানে যোগদানের আগে এই জমি ক্রয় করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জমি সংস্থান কমিটির সদস্য উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ দারুল হুদা বলেন, ক্রয় কমিটির সদস্য হলেও এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে কিছু জানতে হলে ইউএনও স্যারের কাছ থেকে জেনে বলতে হবে।
এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সদ্য বদলিকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমিনুর রহমান বলেন, জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করা হয়নি। যেখানে জমি কেনা হয়েছে, সেখানের জমির দাম আরও অনেক বেশী। এটা জমি মালিকের সাথে বোঝাপড়া করে এক কোটি ২০ লাখ টাকার জমি মাত্র ৭২ লাখ টাকায় কিনেছি। এতে সরকারের ৫০ লাখ টাকা বেচে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমার সুনাম ক্ষুন্ন করতে একটি মহল জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি খুলনা জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্যরা অবগত আছেন। আগামী রোববার তিনি তার নতুন কর্মস্থলে যোগদান করবেন বলেও জানান তিনি।

 

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন