১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার,ভোর ৫:৩০

করোনা বৈরী পরিস্থিতিতে সুন্দরবনে মধু ও মোমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২০

  • শেয়ার করুন

মাসুম হাওলাদার বাগেরহাটঃ করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে এক বছর সুন্দরবনে দর্শনার্থী প্রবেশ সীমিত থাকায় গাছগাছালি বেড়েছে, সেই সঙ্গে মৌমাছির আবাসস্থল নিরাপদ থাকায় মধু ও মোমের উৎপাদন বেড়েছে। ২০১৯-২০২০ সালের বেশকিছু সময় সুন্দরবনে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সুন্দরবনে ছিল নিরবতা।
মানুষের অযাচিত বিরক্তের হাত থেকে মুক্ত ছিল সুন্দরবনের বৃক্ষ ও প্রাণিকুল।এর ফলে সুন্দরবনের বৃক্ষরাজির ঘনত্ব বেড়েছে অনেকখানি। বৃক্ষের ঘনত্বের সঙ্গে সঙ্গে মৌমাছিসহ অনেক প্রাণি আবাসস্থলও বৃদ্ধি পেয়েছে। মৌমাছির আবাসস্থল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনে মধু ও মোমের উৎপাদন বেড়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে গেল বছরের থেকে প্রায় ৫০০ কুইন্টাল মধু এবং ১৩৭ কুইন্টাল মোম বেশি উৎপাদন হয়েছে। সুন্দরবনে মধু ও মোমের উৎপাদন বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বন গবেষক, সুন্দরবনজীবী, মৌয়াল ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মৌচাক। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে এক হাজার ২২০ কুইন্টাল মধু আহরণ করেছেন মৌয়ালরা। যা ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মধুর উৎপাদন ছিল ৭৪২ কুইন্টাল। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে গেল বছরের থেকে ৪৭৮ কুইন্টাল মধু বেশি উৎপাদিত হয়েছে। এরআগে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪৮৮ কুইন্টাল মধু উৎপাদন হয়েছিল।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্বের পরিমাণও বেড়েছে অনেক। এই অর্থবছরে মধু থেকে রাজস্ব এসেছে নয় লাখ ১৫ হাজার ৩৭৫ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজস্ব ছিল ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮০ টাকা মাত্র।এদিকে, মধুর উৎপাদনের সঙ্গে মোমেরও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এ বছর। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ৩৬৬ কুইন্টাল মোম উৎপাদন হয়েছে। এই থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৫০ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোমের উৎপাদন ছিল ২২৯ কুইন্টাল এবং রাজস্ব ছিল দুই লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২০১৭-১৮ বছরে মোমের উৎপাদন ছিল মাত্র ১৫৮ কুইন্টাল এবং রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৩ টাকা।
মধু ও মোমের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে মৌয়াল নুরু ও লুৎফর রহমান বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে মৌমাছিরা বেশি করে চাক (বাসা) বানাতে পেরেছে। এজন্য এবার মধু ও মোম একটু বেশি পাওয়া গেছে। এছাড়াও বানর, হরিণ, পাখিসহ বেশকিছু প্রাণি গেল বছরের থেকে এ বছর বেশি দেখেছেন বলে দাবি করেন মৌয়ালরা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সুন্দরবনে বৃক্ষরাজি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবনের অনেক জায়গায়ই গাছের ঘনত্ব বেড়েছে। প্রাণ ফিরে পেয়েছে সুন্দরবন। যার ফলে সুন্দরবনে মৌমাছিসহ সব প্রাণি আবাসস্থলও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সুন্দরবনে মধু ও মোমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আশাকরি এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন