প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৫
তথ্য প্রতিবেদক : ‘খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার চলমান মেগা প্রকল্পের মাঝ পথ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীকে সরিয়ে দিয়ে নতুন প্রকল্পে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের মাঝপথে এমন বদলিকে কেন্দ্র করে তোলপাড়া চলছে খুলনা ওয়াসায়। আওয়ামী পরিবারের কোটায় রাজস্বখাতে অন্তর্ভূক্ত হওয়া ওই প্রকৌশলীকে ইতিপূর্বে আরও একটি মেগাপ্রকল্পে নিয়োগ দেয়া হয়।
খুলনা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল্লাহ এর ঘনিষ্টভাজন হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামাল হোসেনকে অর্ধেক সম্পন্ন হওয়া প্রকল্প থেকে প্রত্যাহার করে নতুন প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করা হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
এদিকে মাঝ পথ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামাল হোসেনকে সরিয়ে অন্য একটি প্রকল্পের ফোকাল পার্সন করায় পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের নেটওয়ার্কিং এর বিষয়টি দেখভালের কোন কর্মকর্তা এখন নেই বলে ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, খুলনা ওয়াসার সবচেয়ে বড় প্রকল্প পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় প্রকৌশলী মোঃ কামাল হোসেনকে। প্রকল্প মেয়াদ শেষে তার চাকরীও শেষ হয়। কিন্তু তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ পিইঞ্জ এর একান্ত আস্তাভাজন হওয়ায় এবং আওয়ামী পরিবারের কোটায় তাকেসহ ৯ জনকে খুলনা ওয়াসায় (রাজস্বখাতে) স্থায়ী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি ওই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন। সেই প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রী উল্লেখ করেন, নিয়োগ প্রাপ্তরা আওয়ামী পরিবারের সদস্য।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামাল হোসেনকে এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয় পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পে। কিন্তু খুলনা ওয়াসার ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার এই মেগা প্রকল্পের মাঝ পথ থেকে তাকে রহস্যজনক কারণে সরিয়ে পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর ফোকাল পার্সনের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ২০২৪ সালের ৩০ মে তড়িঘড়ি করে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ এক অফিস আদেশে এই নিয়োগ দেন। তবে পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের নেটওয়ার্কিং এর দায়িত্বে আর কাউকে তিনি নিয়োগ প্রদান করেন নি।
খুলনা ওয়াসার সাবেক এমডি আব্দুল্লাহ পিইঞ্জের ওই অফিস আদেশে প্রকৌশলী মোঃ কামাল হোসেনকে সরানোর কোন কারণও উল্লেখ করা হয়নি। খুলনা ওয়াসা পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর ফোকাল পার্সন করা হয়েছে তাকে। তবে ওই পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প থেকেই তিনি এখন বেতন গ্রহণ করছেন।
ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নতুন একটি প্রকল্পে তাকে “বিশেষ কারণে” দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আওয়ামী পরিবারের সদস্য তিনি এটাই কি সে বিশেষ কারণ, এমন প্রশ্ন তাদের।
স্থানীয় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা বলছেন, চলমান প্রকল্প থেকে হঠাৎ একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে সরিয়ে অন্য প্রকল্পে দেওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। প্রকল্পের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ এতে প্রভাব ফেলেছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। তারা আরও বলেন, এই প্রকল্পে অনেক বড় অংকের অর্থ জড়িত। দায়িত্ব হস্তান্তর মানেই ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবর্তন। সেখানে স্বার্থ থাকা অস্বাভাবিক নয়।
এব্যাপারে পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান সেলিম আহাম্মদ বলেন, আমাদের প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজ করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হলেও কাজের গতি ঠিক রয়েছে। তবে মাঝপথে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামাল হোসেনকে সরিয়ে অন্য প্রকল্পে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, তাকে অন্য একটা ভালো প্রকল্পে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এক প্রকল্প থেকে অন্য প্রকল্পে কেনো দেয়া হয়েছে তা আগের ব্যববস্থাপনা পরিচালক জানেন।
জানা যায়, ২০২০ সালের ২৮ জুলাই ‘খুলনা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়। প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ১ হাজার ৪০৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং সরকারের নিজস্ব তহবিলের ৯২৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে এর আগেই দুটি শোধনাগার এবং আটটি পাম্প স্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।