প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
দুদকের জালে আটকা মোংলা বন্দরের কর্মচারী ও সাবেক কর্মকর্তা
মোংলা প্রতিনিধি : মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ হলেও অদৃশ্য কারণে সম্পত্তি শাখা চাকরী করতেন নুরুল ইসলাম নামের এক কর্মচারী। আর সেখানে বসেই নানা রকম দূর্নীতি আর অনিয়ম করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তিনি বন্দরের শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন ফ্যাক্টরির ড্রেজিংকৃত বালু রাখার ডাইকের ব্যবস্থা করে দেওয়া থেকে শুরু করে, নিয়োগ বানিজ্য ও বন্দরের বিভিন্ন প্লট বা ভূমি বরাদ্দ দিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করেছেন। এমনকি পুরাতন চালনা পোর্টের জায়গা অনিয়মের মাধ্যমে একটি শিপিং এজেন্টকে বরাদ্দ দেয়াসহ অবৈধ স্থাপনা থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে প্রতি মাসে টাকা আদায় করা যেন তার কাছে ছিল রুটিন ওয়ার্ক।
তার এ কাজে কোন সিনিয়র কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা করতেন না তিনি। কারণ তাঁর মাথার ওপর সব সময় ছায়া হিসেবে থাকতেন সম্পত্তি বিভাগের প্রধান সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ শাহিনুর আলম। সে কারণেই দূর্ণীতি করে মোটা অংকের অর্থ বানিয়েছেন নুরুল ইসলাম। তবে চতুর ওই কর্মচারী অবৈধ পন্থায় উপার্জন করা কাড়ি কাড়ি টাকা কোথায় রেখেছেন বা তা দিয়ে কোথায় সম্পদ গড়েছেন কেউ জানেনা। তবে তার এই অবৈধ টাকার সন্ধানে মাঠে নেমেছে দূর্ণীতি দমন কমিশন।
ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মামলা হওয়ার পর তাদের এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দূর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে চিঠি এসেছে। গত ১১ আগষ্ট দুদকের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল স্বাক্ষরিত পাঠানো ওই চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়। ওই চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ২১/২০২৪ নম্বরের মামলায় অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়।
দুদক থেকে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ নুরুজ্জামান বৃহস্পতিবার(১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বলেন, এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ- ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কর্ম) মোঃ সালেহ্ উদ্দিন কবিরকে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর লাইব্রেরিয়ান নুরুল ইসলাম ও সাবেক (পরিচালক প্রশাসন) শাহিনুর আলমের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন, রাজশাহী সদরের বাসিন্দা মোঃ নুরুল ইসলাম ২০১৯ সালে মোংলা বন্দর স্কুল এন্ড কলেজের লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ পান। মাস ছয়েক সেখানে চাকরী করার পর অস্থির নুরুল সেখান থেকে এক লাপে চলে আসেন সুবিধাজনক স্থান সম্পত্তি শাখায়। দুই বছর সম্পত্তি শাখায় আসীন থেকে লুটপাট চালিয়ে দূর্ণীতি করে দুই হাত ভরে কামিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। তার এই দূর্নীতির আশ্রয় প্রশ্রয়ে পর্দার আড়ালে ছিলেন তৎকালীন বন্দরে কর্মরত পরিচালক (প্রশাসন) শাহিনুর আলম। তার মদদেই ওই কর্মচারী বেপরোয়া হয়ে কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। তার দূর্নীতির বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে ওই পরিচালককে দিয়ে চাকরী খেয়ে দেয়ার ভয় দেখাতেন।
এদিকে দূর্ণীতি আর অনিয়ম করে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি মানতে নারাজ বন্দরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নুরুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, ‘যে বেশি কাজ করেন তারই দূর্নাম হয়, এটাই স্বাভাবিক। বিগত দিনে যাদের বেআইনি কাজ করে দেইনি তারাই দুদকে অভিযোগ দিয়েছেন’।
আর বর্তমানে আইসিটি মন্ত্রনালয়ে কর্মরত মোংলা বন্দরের সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) শাহীনুর আলমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি।