২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,দুপুর ২:৩১

বাহারি পিঠার স্বদ-গন্ধ নিয়ে মোংলায় শুরু হলো পিঠা উৎসব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

আবুল হাসান, মোংলা : পিঠার নাম শুনলেই জিভে পানি আসেনা এমন বাঙ্গালি পাওয়া খুবই কম। বিশেষ করে শীতে পিঠা বাঙ্গালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিছেদ্য অংশ। তাইতো শীতের মধ্যেই ঐতিহ্যপ্রিয় বাঙ্গালির ঘরে হাজির হয়েছে পিঠার আমোদ। গ্রামে-গঞ্জে কৃষানী গৃহস্থবাড়িতে টাটকা চালে তৈরি হয় বাহারি পিঠা-পুলি। মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে মূলত ঋতুর প্রথম ভাগ থেকেই। বাঙ্গালি ঐতিহ্য কী সুন্দর করেই না মা-বোনেরা তাদের কাছের মানুষগুলোকে পিঠা পরিবেশন করেন। এটাই যেন তাদের সৌন্দর্য। ঠিক তেমনি ঘরের আপ্যায়নের মতোই আপ্যায়ন মিলেছে এই পিঠা উৎসবে। পিঠা বানানো ও খাওয়ার ধুম চলে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারী) সকাল থেকে মোংলা উপজেলার বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নে।

এবার মুখরোচক সব পিঠার ঘ্রাণে এদিন সকাল শুরু হয় সেই প্রাণের উৎসব। বুড়িডাঙ্গা ইউনিয়নের কালী বাড়ী, বৈরাগখালী ও বাটারাবাদ গ্রামে প্রায় ১০ পদের পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন পিঠা শিল্পীরা। যার মধ্যে রয়েছে-চিতাই পিঠা, দুধ চিতই, ভাপা পিঠা, তেলের পিঠা, তেজপাতা পিঠা, মুঠি পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, ও সিঁয়াই পিঠা।

কনকনে শীত উপেক্ষা করে পিঠার স্বাদ নিতে হিন্দু, মুসলিম ও খ্রীষ্টীয়ানসহ বিভিন্ন ধর্ম বর্নের নানা বয়সের হাজারো মানুষের মিলনমেলায় পরিনত হয় এই উৎসব। এদিন (মঙ্গলবার) সকালে সারিবদ্ধভাবে চুলা বসিয়ে বুড়িডাঙ্গা গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারীরা পিঠা তৈরি শুরু করেন। পরে সবাই একত্রিত হয়ে বসে পিঠা খাওয়া শুরু করেন। পিঠা খাওয়া শেষে কুইজের মাধ্যমে সেরা পিঠা তৈরি নারীদের দেওয়া হয় পুরস্কার। ভবিষ্যতে এই পিঠা উৎসবের এ আয়োজন পুরো জেলায় ছড়িয়ে দিতে চান আয়োজকরা।

পিঠা উৎসবের আয়োজনের সহযোগী ও বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণসহ স্স্ কারণে এখন আর গ্রামে-গঞ্জে সেভাবে পিঠা উৎসব হয়না। সেই উৎসব এখন নানা আনুষ্ঠানিকতায় হচ্ছে। অন্তত এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠাপুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি। গত সাত বছর ধরে আমার ইউনিয়নে এই পিঠা উৎসব হয়ে আসছে বলেও জানায় উদয় শংকর।

পিঠাশিল্পী তৃষœা বিশ্বাস, মিতা সরদার, তনুশ্রী বিশ্বাস ও শিখা রায় ও প্রিয়া ঘোষাল বলেন, ‘শীতের জনপ্রিয় হচ্ছে পিঠা। কালের গভীরে কিছু হারিয়ে গেলেও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। শীতকালে শুধু গ্রামবাংলাই নয়, শহর এলাকায়ও পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই পিঠা উৎসব পালন করা হয়। যতখন লোকজন এসেছেন, ততক্ষন পিঠা বানানো হয়েছে এবং সবাইকে নিমন্ত্রণ করে তৈরি করা এই পিঠা পরিবেশন করা হয়েছে’।

তারা আরও বলেন, ‘হিন্দু সমাজে পৌষ পার্বণ, মুসলমান সমাজেও তেমনই ফুটে ওঠে পিঠা-পায়েসের আনন্দ এবং ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব হয়। কিন্তু আমরা ঘরে ঘরে না করে সবাই একত্রিত হয়ে আন্তরিকভাবে নতুন উদ্যেগে একসাথে পিঠা বানিয়ে উৎসব পালন করি। এতে সবাই আনন্দঘন পরিবেশ উপভোগ করেন’।

একসময় এ দেশে শত শত নামের ধান ছিল, তেমনি সেসব ধানের পিঠারও অন্ত ছিল না। কত কী বিচিত্র নামের পিঠা! পিঠা তৈরি ছিল আবহমান বাংলার মেয়েদের ঐতিহ্য। পিঠা-পায়েসকে নিয়ে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এখনো অসংখ্য গান, কবিতা ও ছড়া প্রচলিত আছে। পিঠাকে ঘিরে ‘পল্লী মায়ের কোল’ কবিতায় বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন, ‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে ষিম খেয়ে/ আরও উল্লাস বাড়িয়েছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে’।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন