২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,রাত ১১:১৮

সাগরে নিম্নচাপ: মোংলা থেকে ৯৪৫ কি.মি দক্ষিণ-পূর্বে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২২

  • শেয়ার করুন

আন্দামান সাগর ও এর কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে গতকাল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপ এবং পরবর্তী ধাপে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পথে জোরদার হচ্ছে। আসন্ন ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘সিত্রাং’।

শনিবার (২২ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (২ নং) এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় আঘাতের সময়ে কিংবা আগে যদি গতিপথ পরিবর্তন না করে, তাহলে এর গতিমুখ হবে বাংলাদেশের সন্দ্বীপ উপকূল বরাবর। গতকাল ভারতের আবহাওয়া বিভাগের সর্বশেষ ম্যাপে আসন্ন এই ঘূর্ণিঝড়ের ওই গতিপথ প্রদর্শিত হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ও শক্তি কেমন হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় আঘাতের সময়ে অমাবস্যা থাকায় উপকূলজুড়ে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব-প্রস্তুতি হিসেবে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, পোল্ডার রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের জন্য পাউবো’র মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে সক্রিয় ও সতর্ক রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কি.মি. দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪৫ কি.মি. দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে।ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব আবহাওয়ায় ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। গতকাল উপকূলীয় এলাকায় ভ্যাপসা গরম পড়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সপ্তাহে দমকা হাওয়া ও বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আন্দামান সাগর ও এর কাছাকাছি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি গতকাল শনিবার পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরো ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ আকারে দক্ষিণ-পূর্ব ও এর সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে আন্দামান দ্বীপের কাছে অবস্থান করছে। নিম্নচাপটির অবস্থান ১৪.০ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০.৫ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নৌকা ও ট্রলারগুলোকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাস বুলেটিনে জানায়, নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে আজ রোববার সকাল নাগাদ পূর্ব-মধ্য ও এর কাছাকাছি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এটি ক্রমেই উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে গতিমুখ নিয়ে আগামীকাল সোমবার সকাল নাগাদ মধ্য-বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এরপর ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে গতিমুখ বজায় রেখে মঙ্গলবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের সন্দ্বীপ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
এর আগে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ‘গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম’ এর বরাত দিয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ^বিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ২৫ অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি সুপার সাইক্লোন সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। যার পূর্বাভাস দিয়েছে জিএফএস। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘সিত্রাং’। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন উপকূলের যে কোন স্থান দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সরকার সতর্ক বলে জানানো হয়।

বাংলাদেশের উপর থেকে এ বছরের মতো মৌসুমী বায়ু বিদায়ের পরিপ্রেক্ষিতে গতকালও সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও ছিটেফেঁাঁটা বৃষ্টিপাত হয়নি। এ সময়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সন্দ্বীপে ৩৫.৬ এবং সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৪.৮ এবং সর্বনিম্ন ২৫.৪ ডিগ্রি সে.। ঘূর্ণিঝড়-পূর্ব নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে ভ্যাপসা গরম পড়ছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় শেষ রাতে মৃদু শীতের সাথে পড়ছে কুয়াশা।

আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের অন্যত্র রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উপকূলীয় এলাকায় আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এছাড়াও উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

 

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন