২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,রাত ৮:৫১

যশোরের শার্শা উপজেলায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেগঞ্জে।

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২১

  • শেয়ার করুন

 

মিলন হোসেন বেনাপোল,
যশোর সীমান্তের শার্শা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলা থেকে পাঠানো ৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২৯ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে।
এনিয়ে এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় ৬৫০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বেনাপোলে রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনম সেন্টারে গত এক সপ্তাহের আরটিপিসিআর পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যাদের শরীরে এই সময়ে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে বেনাপোল সহ শার্শায় প্রায় অর্ধশত গ্রামের বাসিন্দারা রয়েছেন।

মহামারীর প্রথম ধাপে কেবল বেনাপোল ও নাভারন এলাকায় কোভিড রোগী পাওয়া গেলেও দ্বিতীয় ধাপে তা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
যশোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে শার্শা উপজেলার ৩ জন মারা গেছেন। উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩ জনের।
উপজেলার মাটিপুকুর গ্রামের সাগর বিশ্বাসের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৬), নাভারণ এলাকার হাবীবুর রহমানের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৫৫) ও গোগার বাদল চৌধুরীর স্ত্রী সবিতা রানী (৬০) মারা গেছেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে।

আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কায়বা ইউনিয়নের ধান্যতাড়া গ্রামের প্রয়াত ইমাম আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান (৭৫), কাশিয়ানী গ্রামের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৪০) ও রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে রফি উদ্দিন (৭০)।
প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে অনেকেরই ৮ থেকে ১০ দিন সর্দি-কাশি-জ্বর-গলাব্যথার মত উপসর্গ থাকলেও তারা কোভিড পরীক্ষা করাতে অনীহা দেখাচ্ছেন। ফলে শনাক্তের প্রকৃত সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না।
সংক্রমণ ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিরা শহর অঞ্চলের কঠোর অবস্থানে থাকলেও গ্রাম অঞ্চলের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে ১২ দফা কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরদিন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের দেওয়া আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে কড়াকড়ি বাড়ানোর কথা বলা হয়।
শার্শার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা জানিয়েছেন, জেলা কোভিড প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তে ১৬ জুন থেকে সাত দিনের জন্য বেনাপোল বাজার ও শার্শা সদর ইউনিয়নকে উচ্চ ঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
এসব এলাকায় ঘরের বাইরে এবং জনসম্মুক্ষে সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেলে একজন ও ইজিবাইকে দুইজনের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না।
সকল প্রকার গণজমায়েত, সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিনা কারণে সন্ধ্যা ৬টার পর ঘরের বাইরেও যাওয়া যাবে না।
বেনাপোল ও নাভারনে দোকানপাট, শপিংমল, বিপণীবিতাণ বন্ধ রাখার কথা থাকলেও সরেজমিনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। বাগআচড়া এলাকায় বিধিনিষেধ মানছে না সাধারণ মানুষ।

পাশের উপজেলা সাতক্ষীরার কলারোয়ায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানকার লোকজন কাজকর্ম করতে আসছেন বাগআচড়া বাজারে। গ্রামের বাজারগুলোতে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখতে দেখা গেছে।
বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন,করোনা সংক্রমণের অন্যতম হটস্পট এখন বাগআচড়া। আমরা আতঙ্কিত। বাগআচড়া সাতমাইলে রয়েছে পশুহাট ও বাগআচড়া বাগুড়িতে বসে আমের হাট।

“গরু ও আম কেনাবেচার জন্য এ দুটি হাটে সারা দেশের মানুষের সমাগম ঘটে। এখানে শত চেষ্টা করেও শারীরিক দূরত্ব কিম্বা মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব না।

স্থানীয় আলিম হোসেন জানান, এখান থেকে দূরপাল্লার বাসসহ আন্তঃজেলা বাস ছাড়ছে। সাতক্ষীরার মানুষ ভেতরের রাস্তা দিয়ে বাগআচড়ায় যাতায়াত করছে। বাগআচড়ায় ইতোমধ্যে ১৬ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। পরীক্ষা হলে এ সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন