২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার,সকাল ১১:২০

মায়ানমারের গোলায় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে একজন নিহত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২

  • শেয়ার করুন

মায়ানমারের গোলায় বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল বাংলাদেশের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে এ রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া কিশোরের নাম মো. ইকবাল (১৫)। সে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা মুনির আহমদের ছেলে।

এর আগে মায়ানমারের একটি জেট ফাইটার বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে তুমব্রু এলাকা চক্কর দিয়ে রাখাইন রাজ্যের দিকে ফিরে গেছে।

মায়ানমার এলাকায় রাখাইন রাজ্যে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গোলাগুলি চলছে। তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা ও ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টু বলেন, মিয়ানমারের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ছয়জন রোহিঙ্গা আহত হন। পরে ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গা তরুণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এক শিশুসহ আহত পাঁচ রোহিঙ্গা বর্তমানে এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত ব্যক্তিরা একই পরিবারের সদস্য কিংবা আত্মীয় কিনা তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবার মুহুর্মুহু গোলাগুলি শব্দ শোনা যায়। প্রায় তিন দিন গোলাগুলি বন্ধ থাকার পর শুক্রবার আবার গোলাগুলি শুরু হয়েছে। মর্টার শেলের গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে এপারের ভূখণ্ড। এতে এপারের ঘুমধুম ইউনিয়নের ২০ গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ সংবাদ মাধ্যমে বলেন, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মিয়ানমারের পাহাড় থেকে মুহুর্মুহ গুলিবর্ষণের পাশাপাশি থেমে থেমে মর্টার শেল ছোড়া হচ্ছিল। বেশ কিছু গুলি ও মর্টার শেল শূন্যরেথার বিভিন্ন জায়গায় এসে পড়ছিল। রাত আটটা ২০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দে একটি মর্টার শেল আশ্রয়শিবিরের ওপর এসে পড়ে। এত ছয়জন রোহিঙ্গা আহত হন। পরে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

মায়ানমারের বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পাঁচ বছর ধরে আশ্রয়শিবির গড়ে বসবাস করছে । আশ্রয়শিবির ঘেঁষে (পেছনে) মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড়। পাহাড়ের ওপর দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক তল্লাশিচৌকি।

শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে পাহাড়ের চৌকি থেকে ব্যাপক হারে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। গোলাগুলি চলছে। কিন্তু কী কারণে এত বেশি গোলা ও মর্টার শেল ছোড়া হচ্ছে, তা জানা যাচ্ছে না।

৯ সেপ্টেম্বর মায়ানমার থেকে ছোড়া একটি ভারী অস্ত্রের গুলি তুমব্রু বাজারের পাশে কোনারপাড়ার কৃষক শাহজাহানের বাড়ির আঙিনায় এসে পড়ে। বাড়ির পাশেই শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। এর আগেও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ার ঘটনায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ।

আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা জানায়, তিন দিন গোলাগুলির শব্দ কানে আসেনি। তবে আশ্রয়শিবিরের পেছনে দূরের ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। গুলির শব্দ কানে বাজছে। এর মধ্যে গত সোমবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ জেট ফাইটার থেকে গোলা ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। রোহিঙ্গা নেতাদের ধারণা, তিন দিন এই সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ রেখে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে মায়ানমার।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত ১৩ আগস্ট থেকে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) যুদ্ধ চলছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধ বন্ধের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পাহাড়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর যুদ্ধ পরিস্থিতি এপার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সীমান্তে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এপারে তৎপর বিজিবি।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে শূন্যরেখার কাঁটাতারের কাছে গরু আনতে গিয়ে তুমব্রু এলাকার চাকমাপল্লির এক তরুণ স্থল মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালি আলাদা হয়ে গেছে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন