প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১
প্রকাশিত:
সীমান্ত ব্যুরো প্রধান, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডের আউটগোয়িং মনিটরিং কক্ষে চলছে চাঁদা আদায়ের রমরমা ব্যবসা। স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডের নিরাপত্তা কর্মী (সিকিউরিটি ওয়ার্কার) ও কাষ্টমস থেকে দায়িত্ব দেওয়া দালাল সাব্বির হোসেনের যোগসাজসে প্রতিদিন চলছে চাঁদা বাণিজ্যের মহোৎসব। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাষ্টমস কর্মকর্তাদের রাজি খুশি রেখেই এই অবৈধ চাঁদাবাণিজ্য দীর্ঘদিন চলছে বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীদের রয়েছে অভিযোগ। বন্দর উত্তর পাশ^বর্তী লহ্মীদাঁড়ী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাব্বির হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে পার্কিং ইয়ার্ডের ৩ নং গেট সংলগ্ন আউটগোয়িং মনিটরিং কেন্দ্রটি। বর্তমানে আউটগোয়িং মনিটরিং কেন্দ্রটি চাঁদাবাণিজ্যের আঁখড়ায় পরিণত করার দায়িত্ব নিয়েছে দালাল সাব্বিরসহ পার্কিং ইয়ার্ডের কিছু অসাধু নিরাপত্তা কর্মী ও নৈশ প্রহরীরা। অভিযোগ উঠেছে, উঠতি বয়সের এই দালাল সাব্বিরকে দিয়ে স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডের আউটগোয়িং মনিটরিং কক্ষে কাষ্টমস থেকে রাজস্ব পরিশোধকৃত ভারত-বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাক, ট্রাক নাম্বার ও পণ্য তালিকা রেজিস্টার্ড বহিতে এন্ট্রি করার দায়িত্বে নিযুক্ত করার পর সে বিপুল পরিমান চাঁদাবাজির অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ড থেকে আউটগোয়িং ৩নং গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় বাংলাদেশী পণ্যবাহী প্রতি ট্রাক এবং পাথর, ভূষি ও গমভর্তি ভারতীয় ট্রাক প্রতি বাধ্যতামূলক চাঁদার ৩০ টাকা নেওয়ার পর ট্রাক চালকদেরকে আউটপাস দেয় সাব্বির। এছাড়া পার্কিং ইয়ার্ডের মধ্যে বাংলাদেশী খালি ট্রাক রাত্রে অবস্থান করলে ট্রাক প্রতি ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলো অবস্থান করলে ট্রাকপ্রতি ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করছে দালাল সাব্বির ও তার সহযোগী অসাধু কিছু সিকিউরিটি গার্ড (নিরাপত্তা প্রহরী)। এছাড়া তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে দালাল সাব্বিরের অপকর্মের খতিয়ান। গত ৪ই আগস্ট ২০২১ তারিখে বেনাপোল কাষ্টম হাউজ কমিশনারের অনলাইন সার্ভেয়ারে বিন-লকের কারণে ভারত থেকে আমদানীকৃত ৮ গাড়ি ফল আটক করে ভোমরা কাষ্টমস।কিন্তু আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান বিন আন-লক করতে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নিয়ে ভোমরা স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডে আটককৃত ৮ গাড়ি ফল কাষ্টমস ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবগত না করে সিএন্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের চুক্তির বিনিময়ে বাংলাদেশী ট্রাকে লোড দিয়ে গায়েব করার উদ্দেশ্যে তিন নং আউটগোয়িং গেটের সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু জাতীয় গোয়েন্দা নিরাপত্তা (এনএসআই) সংস্থার তৎপরতায় ভেস্তে যায় দালাল সাব্বিরের মহা পরিকল্পনা। এছাড়া সাব্বির সিএন্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পকেট গরম করার চুক্তি করে কাষ্টমস ও ব্যাংক থেকে রাজস্ব পরিশোধকৃত ছাড়পত্র হাতে আসার আগেই অগ্রিম আউটপাস দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পার্কিং ইয়ার্ডের বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। পরে ব্যাংক ও কাষ্টমস থেকে রাজস্ব পরিশোধকৃত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে বলে এমন অভিযোগও রয়েছে একাধিক সূত্রের। এ ব্যাপারে দালাল সাব্বিরকে জিজ্ঞাসা করলে সে সাংবাদিকদের জানায়, কাষ্টমসের পক্ষ থেকে পার্কিং ইয়ার্ডের আউটগোয়িং মনিটরিং কক্ষ থেকে বাংলাদেশ-ভারতের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো রেজিস্টার্ড বহিতে এন্ট্রি করার দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু আউটগোয়িং মনিটরিং কক্ষে দুইজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার কাজও আমাকে করতে হয়। এছাড়া সাব্বিরের মাসিক পারিশ্রমিক সম্পর্কে জানতে চাইলে সে জানায়, কাষ্টমস থেকে অন্যান্য এনজিওদের মতো প্রতিমাসে সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে আমাকে ৬ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। এছাড়া সে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আরো জানায়, আমার রুজি মারবেন না। এদিকে আউটগোয়িং মনিটরিং কক্ষে সাব্বিরের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভোমরা কাষ্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা(প্রশাসন) আকবর আলী জানান, আউটগোয়িং কক্ষে দু’জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার সহযোগী হিসেবে সাব্বির কাজ করে। তবে সে পার্কিং ইয়ার্ডের পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করে কিনা এ বিষয়টি তার জানা নেই। এছাড়া পার্কিং ইয়ার্ডের সিকিউরিটি গার্ড (নিরাপত্তা প্রহরী) ও সাব্বিরের চাঁদা বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (এডি) মাহমুদুল হাসান বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে না জানার নাটক করেন। তাছাড়া তিনি সংবাদকর্মীদের সম্মুখে অথবা ক্যামেরার সামনে কথা বলতেও নারাজ।