১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সন্ধ্যা ৭:৩৪

শিরোনাম

বিশ্বকাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশের

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২১

  • শেয়ার করুন

দুঃস্বপ্নের প্রহরও একটা সময় শেষ হয়। অনেক প্রতীক্ষা শেষে হেসে ওঠে সাফল্যের সূর্য। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন অমানিশার অন্ধকার! কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সেই একই গল্প, প্রবাসী দর্শকরা স্লোগানে স্লোগানে চারপাশ মুখরিত করে মাঠে আসছেন, আর ম্যাচ শেষে ফিরছেন এক বুক হতাশা নিয়ে। মাঠ পাল্টাচ্ছে, প্রতিপক্ষ বদলাচ্ছে; বাংলাদেশ দল আছে হারের বৃত্তেই। মধ্যপ্রাচ্যের মরুর শহরে এসে চোরাবালিতে ডুবে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। 

আশা যা একটু ছিল কাগজে-কলমে। শেষ দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিততে পারলে, সঙ্গে অনেক ‘যদি-কিন্তু’র হিসাব মিলে গেলেই কেবল অসাধ্য সাধন হতো।

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে হলো না। লজ্জার ব্যাটিং পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে এক ম্যাচ থাকতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হলো টাইগারদের।

আবুধাবিতে আজ (মঙ্গলবার) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৮৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে ৬ উইকেটে হেরেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ৩৯ বল হাতে রেখে পাওয়া এই জয়ে প্রোটিয়ারা সেমির পথে দিয়ে ফেলেছে এক পা।

হাতে মাত্র ৮৪ রান। বোলারদের মিরাকল কিছুই করতে হতো। শুরুটা অবশ্য দারুণই করেছিলেন তাসকিন-মেহেদিরা। ৩৩ রান তুলতেই প্রোটিয়াদের ৩ উইকেট তুলে নেন তারা।
তাসকিন এই ম্যাচে দারুণ বোলিং করছেন। ইনিংসের প্রথম ওভারেই দলকে সাফল্য এনে দেন এই গতিতারকা। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন রিজা হেনড্রিকসকে (৪)।

এরপর ২২ রানের একটি জুটি হয়েছিল কুইন্টন ডি কক আর ভ্যান ডার ডাসেনের মধ্যে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে সেই জুটিটি ভাঙেন শেখ মেহেদি। ১৫ বলে ১৬ করা ডি কককে বোল্ড করেন এই অফস্পিনার।

পরের ওভারে তাসকিনের আবারও আগুনে বোলিং। ওই ওভারে প্রথম তিন বলে এক রান দেওয়ার পর চতুর্থ বলে দারুণ এক ইনসুইঙ্গারে এইডেন মার্করামকে পরাস্ত করেন তাসকিন।

অনেকটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া বল বুঝতে না পেরে ব্যাটটাই হাত থেকে ছুটে যায় মার্করামের। হতে পারতো হিটউইকেট কিংবা ইনসাইডেজে ক্যাচ। বেঁচে যান মার্করাম।

তবে পরের বলটিতে তাসকিন আর বাঁচতে দেননি প্রোটিয়া ব্যাটারকে (০)। এবার তার দারুণ ডেলিভারি ঠিক টেস্টের মতো ডিফেন্স করতে গেলে বল চলে যায় স্লিপে। সুযোগ হাতছাড়া করেননি নাইম শেখ।

শেষদিকে এসে ভ্যান ডার ডাসেনকে (২৭ বলে ২২) আউট করে পরাজয়ের ব্যবধান একটু কমিয়েছেন নাসুম আহমেদ। মিডঅনে অনেকটা দৌড়ে এসে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন শরিফুল ইসলাম।

৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন তাসকিন। একটি করে উইকেট মেহেদি হাসান আর নাসুম আহমেদের।

এর আগে আবুধাবিতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। প্রোটিয়া বোলারদের তোপে ৩৪ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ৫ উইকেট।

অথচ ওপেনিং জুটিতে ইতিবাচকই মনে হচ্ছিল নাইম শেখ আর লিটন দাসকে। সেই ইতিবাচকতা অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।

২২ বলে ২২ রানের জুটি গড়েই সাজঘরের পথ ধরেন নাইম। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে কাগিসো রাবাদাকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ হন এই ব্যাটার (১১ বলে ৯)।

পরের বলে আউট সৌম্য সরকারও। রাবাদার দুর্দান্ত এক ইয়র্কার ডেলিভারি মিস করে প্যাডে লাগে বাঁহাতি এই ব্যাটারের। আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে সিদ্ধান্ত বদলে যায়। গোল্ডেন ডাকে ফেরেন সৌম্য।

এরপর উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু মুশফিক আরও একবার হতাশাই উপহার দিয়েছেন।

নিজের আগের ওভারের শেষ দুই বলে উইকেট পাওয়ায় রাবাদার হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথম দুই বল কোনোমতে সামলান মুশফিক। কিন্তু তৃতীয় বলে ঠিকই উইকেট দিয়ে আসেন।

রাবাদার বাউন্সি ডেলিভারি তাল সামলাতে না পেরে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়ে স্লিপে হেনড্রিকসের ক্যাচ হন মিস্টার ডিপেন্ডেবল (৩ বলে ০)।

পাওয়ার প্লে’র প্রথম ৬ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ২৮ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। এরপরও ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল থামেনি।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৯ বলে ৩) মুশফিকের মতোই বাউন্সি ডেলিভারির ফাঁদে পড়েন। অ্যানরিচ নর্টজের শর্ট বল টাইগার দলপতির গ্লাভস ছুঁয়ে যায় স্লিপে মার্করামের কাছে।

আম্পায়ার আউট দিলে কী মনে করে যেন শেষ মুহূর্তে রিভিউ নিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল তার গ্লাভসে লেগেছে।

এমন বিপর্যয়ের মধ্যেও পরের ওভারের প্রথম বলেই আত্মঘাতী শট খেলতে যান আফিফ হোসেন ধ্রুব। ডাউন দ্য উইকেটে এসে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে হিট করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড হন এই তরুণ। বাংলাদেশের ইনিংসে গোল্ডেন ডাকের খাতায় যোগ হয় আরেকটি নাম।

লিটন একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন। অবশেষে তার উইকেটটিও তুলে নেন তাবরেজ শামসি। নিজের প্রথম ওভারে এসেই লিটনকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন প্রোটিয়া স্পিনার। ৩৬ বলে লিটনের ২৪ রানের ধীরগতির ইনিংসটিতে ছিল কেবল একটি বাউন্ডারি।

এরপর তিন ওভার উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ১৬তম ওভারে শামীম হোসেন পাটোয়ারী ২০ বলে ১১ করে ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা মারতে গিয়ে হন শামসির দ্বিতীয় শিকার।

শেষদিকে শেখ মেহেদি হাসানের ২৫ বলে ২ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ২৭ রানের ইনিংসে ভর করে কোনোমতে ৮৪ পর্যন্ত যায় বাংলাদেশ। ইনিংসের ১০ বল বাকি থাকতে হয় অলআউট।

প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অ্যানরিচ নর্টজে। মাত্র ৮ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন এই পেসার। কাগিসো রাবাদাও ৩ উইকেট শিকার করেন ২০ রানের বিনিময়ে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন