২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,রাত ৩:৩৯

বালু উত্তোলনে ভাংছে ইছামতি, একের পর এক ভূ-খন্ড হারাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

দেবহাটা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা সীমানা দিয়ে বয়ে চলেছে ইছামতি নদী। যা বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সীমানা বেয়ে চলেছে। জেলার কয়েকটি বহমান নদীর মধ্যে অন্যতম বহমান ভারত-বাংলার বুকচিরে বয়ে চলা ইছামতি নদী। কিন্তু প্রবাহিত ইছামতি নদী বর্তমানে অভিশাপে পরিনত হয়ে সর্বনাশা রুপ ধারণ করছে। প্রতি বছর ইছামতিতে দেখা দেয় তীব্র ফাটল ও ভাঙন। এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় লক্ষ লক্ষ টাকার। বেড়ে যায় অপ্রত্যাশিত ভোগান্তি।
নদী ভাঙনের কারণ খুঁজতে উঠে আসে অবৈধ বালু কাটা, জাল ঠেলা, অবৈধ ভাবে নদীর পাড় ঘিরে নিয়ে ইচ্ছামত ছোট-বড় মৎস্যঘের তৈরি করা। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান হল ইজারাকৃত ও অবৈধ বালু উত্তোলন করা। যার ফলে দেবহাটা সদর ইউনিয়নের রাজনগর ও চর দেবহাটা মৌজা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে নদী গর্ভে। উপজেলার ২৪ টি মৌজার স্থলে বতর্মানে আছে ২২টি। সীমান্ত সংলগ্ন খানজিয়া, নাংলা, নওয়াপাড়া, ছুুটিপুর, বসন্তপুর, উপজেলা সদর, বিওপি সংলগ্ন ও থানা ভবন, খানপাড়া, শীবনগর, সুশীলগাঁতী, চর-শ্রীপুর, ভাতশালা, কোমরপুর, হাড়দ্দাহ এলাকা ভেঙে যাওয়ায় নতুন নতুন মৌজা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিগত ২০০৯ সালে থানা ভবন হতে কয়েক গজ দুরে সুশীলগাঁতী নামক স্থানে বাধ ভেঙে প্লাবিত হয়। ইছামতি নদীর পানির চাপে ৫-৬ টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ফসলি জমির ধান, মৎস্যঘের, বসত বাড়ির খামার, বাড়ির আঙিনা ডুবে যায়। এতে ব্যাপক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে স্থানীয়রা। তৎকালীন হুমকিতে থাকা এলাকার মানুষের অনেকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়। সে সময় বেঁড়িবাধ নির্মাণ হলেও তার পরের বছর একই স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এরপর ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে এসে আগের বেড়িতে ভাঙন ধরাতে মারাত্বক রূপ নেয়। বাধ্য হয়ে পুরাতন বেড়ির পরিবর্তে নতুন বেড়ি-বাধ দেওয়া হয়। এতে ওই এলাকার কয়েক বিঘা জমি নদী গর্ভের চলে যায়। এভাবে বছরের পর বছর নদীর বেঁড়িবাধ ভাংছে আর দেশের জমির পরিমান ক্রমশ কমছে। তাছাড়া বালু উত্তোলনের ফলে দেবহাটা থানা ভবন, দেবহাটা বিজিবি ক্যাম্প সহ বেশকিছু সম্পদ নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে ভাতশালা বিশ্বাস বাড়ি এলাকায় বেঁড়িবাধ ভেঙে যাওয়ায় নামমাত্র সংস্কার করা হলেও স্থায়ী বাঁধ দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে দ্রুত স্থায়ী বাধের আশ্বাস দিলেও তা কোন কাজে আসেনি। লাখ লাখ টাকার বরাদ্দের টাকা ভেসে গেছে নদীর জলে। এতে সরকারের উন্নয়নে বাজেটকৃত টাকা কাজেই না আসায় দুচিন্তা কাটছে না সীমান্ত পাড়ের মানুষের।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-১ এর পোল্ডার-৩ এর আওতাধীন ভাতশালা বিশ্বাসবাড়ি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের বাড়ির সীমানাবর্তী বেঁড়িবাধ কয়েক বছর ধরে ভেঙে নদীতে বিলীন উপক্রম হয়েছে। ভেঙে যাওয়ার পর থেকে শুধু বাজেট হয় আর নামমাত্র কাজ করে চলে যান ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যরা। বছর জুড়ে সেখানে সংস্কার করা হলেও উন্নতি হয়নি বেড়ি বাধে। অপরিকল্পিত প্লাস্টিকের বস্তায় করে ভাঙন রোধে মাটি ফেলা হচ্ছে। যা নিয়ে স্থায়িত্বের প্রশ্ন উঠেছে।
নদী পাড়ের ভাতশালা গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, নদী ভাঙলে লাভ হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের। নামমাত্র কাজ করে বাজেটের টাকা ঠিকমত ব্যবহার হয় না। আর সেজন্য স্থায়ী কোন কাজ হয়। যার ফরে প্রতিবছর নদী ভাঙন দেখা দেয় আর যেনতেন কাজ করা হয়। স্থানীয়দের প্রতিবারে কোন প্রকার অনিয়ম থামানো যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা একদিন সবকিছু নদীতে হারিয়ে ফেলব। তাই আমাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী বাধ চাই।
ফেরদৌসি বেগম জানান, কাজ হচ্ছে কিন্তু কোন সুফল মিলছে না। বার বার বিভিন্ন জন আসছে তাদেরকে ম্যানেজ করছে, তারা দেখেই চলে যাচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমাদের যে দুঃখ্য সেই দুঃখ্যই থেকে যাবে। জানি না বর্ষার মৌসুমে কি হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এসও) মাহাবুব রহমান জানান, যেভাবে সিডিউল করা হয় সেভাবে কাজ হয়। কোন অনিয়ম হয় না বলে দাবি তার।
এদিকে, চলতি বছরের গত ১০ মার্চ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বালু মহল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে নতুন ভাবে বালু মহাল ইজারা নিতে একটি শ্রেণি বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছে বলে জানা গেছে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন