২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার,সকাল ১১:১০

পঞ্চগড়ে মৃত বেড়ে ৬৮, এখনো নিখোঁজ ৪

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২

  • শেয়ার করুন

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় তৃতীয় দিনে আরও ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ জনে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দিনাজপুরের খানসামা ও বীরগঞ্জ এবং পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বোদার বিভিন্ন নদী থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এখনো চারজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ করছে পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলার ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট। এছাড়াও রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী থেকে আসা তিনটি দলের ৯ জন ডুবুরি উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। আলো থাকা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলবে।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন পযর্ন্ত ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৭ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। মরদেহগুলো শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিখোঁজ বাকিদের উদ্ধারে কাজ চলছে, আলো থাকা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলবে।

এর আগে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। কয়েকজন সাঁতরে তীরে আসতে পারলেও অধিকাংশই পানিতে ডুবে যায়।

মৃতদের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৪ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর ২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ জন ও পঞ্চগড় সদরের একজন রয়েছেন। মৃত ৬৮ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন এবং পুরুষ ১৭ জন। বাকি ২১ জন শিশু।

এই দুর্ঘটনার জন্য অসচেতনভাবে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠাকেই দায়ী করছেন নৌকার মাঝি ডিপজল ও ঘাট ইজারাদার আব্দুল জব্বারসহ স্থানীয় প্রশাসন।

গত রোববার বেলা আড়াইটার দিকে আউলিয়া ঘাট থেকে বদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মানুষ হুড়োহুড়ি করে উঠতে থাকেন। সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় নৌকাটিতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ছিল। এ সময় অনেকেই নৌকাটিকে যেতে নিষেধ করছিলেন এবং কেউ কেউ ‘ডুবে যাবে’ বলেও চিৎকার করছিলেন। তবে সে চিৎকার আটকাতে পারেনি নৌকাটিকে।

বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। সেদিন দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ইঞ্জিনচালিত ওই নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিলেন।

বোদা থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন, ‘ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন যে একজন চিৎকার করতেছে, সেই লোকটি আমাদের একজন এসআই। আমরা অনেক চেষ্টা করেও অতিরিক্ত লোক ওঠা বন্ধ করতে পারিনি। বেশি লোক ওঠায় এই দুর্ঘটনা।’

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি লোক ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকাডুবির ঘটনায় পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীপংকর রায়কে প্রধান করে একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন