প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০
খুলনায় বন্ধ নিউজপ্রিন্ট মিলের স্ক্রাব বিক্রির নামে চলছে হরিলুট। রাতের আঁধারে নদী পথে মিলের মালামাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। শনিবার নির্ধারিত স্ক্রাবের সঙ্গে মিলের অন্যান্য মালামাল নেয়ার প্রস্তুতির সময় একটি পক্ষের চোখে পড়ায় স্ক্রাব দেয়া স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। মিলের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার অতিরিক্ত মাল ট্রাকযোগে মিলের বাইরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি বিসিআইসিডিপিএম’র মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাস্ট, সেনা কল্যাণ সংস্থা, ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকর্স এবং বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে মিলের নির্ধারিত মালামালের অর্ডার দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বিমান বাহিনী কল্যাণ ট্রাস্টকে ১১টি জাহাজ, সেনা কল্যাণ সংস্থাকে ৭টি বার্জ, ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কার্সকে ১৭টি গাড়ি এবং পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টকে ২৮টি ক্রেনের অর্ডার দিয়েছে। এ ৪টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা মালামাল না নিয়ে সাব কন্ট্রাকের মাধ্যমে অন্য ৪টি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে।
শনিবার পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের সাব কন্ট্রাক্টর মজিবর আয়রন স্টিলের কর্মীরা ক্রেনের মালামালের সঙ্গে অন্যান্য গুদাম থেকে মালামাল সরিয়ে ক্রেনের মালামালের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে এলাকাবাসীর চোখে পড়ে। একইভাবে ডকইয়ার্ড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাব কন্ট্রাক্টর রাশেদুল ইসলাম তার কর্মীদের দিয়ে গাড়ির মালের সঙ্গে মিলের বিভিন্ন স্থানে রাখা ঢালাই মালামাল ভেঙে লুকিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। যা স্থানীয় মানুষের কাছে ধরা পড়ে।
নগরীর ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন জানান, তারা অনেকবার অতিরিক্ত মালামাল নেয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। মাঝে ভ্যানভর্তি মিলের মাল চুরি করে নেয়ার সময় জনগণ হাতেনাতে ধরে দেয় যা এখনও খালিশপুর থানায় রয়েছে। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হিসাব বিভাগের দ্বায়িত্বরতদের প্রতি এলাকাবাসীর অভিযোগের তীর। এ ব্যাপারে ১৩নং আওয়ামী লীগের সভাপতি মোর্শেদ আহমেদ মনি জানান, প্রতিনিয়ত মিলের মেশিনের দামি যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ব্যবস্থা না নেয়ার অর্থ তারা এতে জড়িত।
এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করেন, বন্ধ নিউজপ্রিন্ট মিলের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এসবের সঙ্গে জড়িত। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামউল্লাহ খন্দকার জানান, শনিবার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করে ডকইয়ার্ড ও পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের সাব ঠিকাদারদের স্ক্রাবের স্তূপে চুক্তির বাইরের মালামাল দেখতে পেয়েছেন। তিনি মালামাল নেয়া তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেন।
তবে যথাযথ তদারকি না করলে মিলের মালামাল যা আছে তাও লুটপাট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।