প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২০
গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) পিসিআর ল্যাবে ১০২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৯৭ জনই খুলনা জেলার। এছাড়া বাগেরহাটের ২ জন, যশোরের ২ জন ও নড়াইলের ১ জন রয়েছেন। এটাই একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত।এই নিয়ে খুলনায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৮২ জন।
বুধবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) পিসিআর ল্যাব ও খুলনা সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
খুমেকের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, বুধবার পিসিআর ল্যাবে ২৮৪ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে খুলনা নমুনা ছিল ২৭০ টি। মোট পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ১০২ টি। যার মধ্যে ৯৭ জনই খুলনা জেলার,বাকিরা বাগেরহাটের ২ জন, যশোরের ২ জন ও নড়াইলের ১ জন রয়েছেন।
খুলনা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, একদিনে শনাক্ত হওয়ার দিক থেকে খুলনায় এটিই সর্বোচ্চ। এর আগে গত শনিবার একদিনে সর্বোচ্চ ৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়, গত সোমবার খুলনায় ৪২ জনের করোনা শনাক্ত। গতকাল মঙ্গলবারও সর্বোচ্চ ৪৯ জন শনাক্ত হয়েছে। আজ বুধবার ৯৭ জন শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে একদিনে রেকর্ড সংখ্যক কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হলো। এনিয়ে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে এখন পর্যন্ত ৫৮২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
খুলনায় যারা শনাক্ত হয়েছেন: খুলনা সদর হাসপাতালে কর্মরত এক নারী (৪৮), বয়রা নুর নগরের এক শিশু (৪), বয়রা পাবলিক কলেজের এক নারী, খুলনা মেডিকেলে প্রিজন সেলে এক নারী (৫৬), শেখপাড়ার এক বৃদ্ধ (৬০), এক যুবক (২৫) ও এক পুরুষ (৫০), হোসেনপুরের এক পুরুষ (৩৭), রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত এক পুরুষ (৪৫), আইপি-৬’র এক বৃদ্ধ (৭০), জেলা কারাগারে তিন জন পুরুষ (৪৫), (২৪) ও (২৭), টুটপাড়ায় একজন পুরুষ (৫২), কাশেমনগরের এক যুবক (৩৩), সোনাডাঙ্গা খোকন সাহেবের বাড়ির একজন পুরুষ (৫৯), সোনাডাঙ্গায় দুই যুবক (৪০) ও (৪৭), দৌলতপুর রেলিগেটে এক নারী (৫৩), রূপসার খান মোহাম্মদপুরে (৪১), ৮২/৮৩ স্যার ইকবাল রোডে এক পুরুষ (৩৬), বটিয়াঘাটার হরিণটানায় একনারী (৩৪), সোনাডাঙ্গা আবাসিকের এক যুবক (৩৩), তারেরপুকুর এলাকায় এক যুবক (৩৮), হাফিজ নগরে একজন পুরুষ (৪০), গল্লামারী গরদাহ রোডে একজন পুরুষ (৩৬), নিরালা আবাসিকে একজন পুরুষ (৪১), দৌলতপুরে এক পুরুষ (৪৫), ৩৩৫ শের-এ-বাংলা সড়কে একবৃদ্ধ (৭৫) ও এক পুরুষ (৫৫), সদরথানা মোড় এক পুরুষ (৩৮), বড় মির্জাপুরে এক যুবক (৩৮) ও এক নারী (৩৫), খালিশপুর ক্রিসেন্ট বাজার এলাকার এক নারী (৫৯), এক যুবক (২৮), জোড়াগেটে একযুবক (৩২), দিঘলিয়া উপজেলা এক যুবক (৩২), গল্লামারী এক যুবক (৩৭), বয়রায় এক পুরুষ (৫৮), নিরালায় এক শিশু (৬), মোহাম্মদ নগরের এক যুবক (৩৮), হাজীমহসিন রোডে এক পুরুষ (৪৫), বানিয়খামার এলাকায় এক যুবক (২৪), ছোট বয়রায় এক যুবক (৩৯), ঠিকানা উল্লেখ নেই এক যুবক (৩৯), ৫০ বিকে রায় রোডে এক পুরুষ (৩৮), তিন নারী (২৯), (৩২) ও (৩৯), খালিশপুরের এক শিশু (৬), বঙ্গবাসী এলাকায় এক যুবক (২৮), এক পুরুষ, হাউজিং এলাকায় এক বৃদ্ধ (৮৬), এক পুরুষ (৩২), লাল হাসপাতালের পিছনে এক পুরুষ (৪৫) ও ক্রিসেন্ট এলাকায় এক যুবক (৩৩), বড় মির্জাপুরে এক নারী (২০), আইডিয়াল কলেজ মোড় সোনাডাঙ্গা একজন যুবক (৩২), পাবলা দৌলতপুরে এক নারী (৪০), পুলিশ কোয়ার্টারের এক নারী (৩০), মিস্ত্রিপাড়া এক পুরুষ (৪৩), মুসলমানপাড়ার এক নারী (৪৫), পইপাড়ায় এক বৃদ্ধ (৭০), বাগমারায় এক পুরুষ (৪৩), হাজী ইসমাইল সড়কে এক পুরুষ (৫০), আইডিয়াল কলেজের এক নারী, গল্লামারী এক কিশোর (১৬), বড় বয়রায় এক নারী (৪২) ও এক পুরুষ (৪৫), খুলনা মেডিকেলে কর্মরত এক নারী (৩১) ও এক পুরুষ (৪২), যশোর রোডে এক পুরুষ (৫৩), ডুমুরিয়া উপজেলার (৪০), আড়ংঘাটা বকুলতলায় এক কিশোরী (১৬), দৌলতপুর কবুর বটতলায় এক পুরুষ (৫০), সোনাডাঙ্গা সবুজবাগ আবাসিকের এক নারী (৪৭) ও এক পুরুষ (৫২), মুজগুন্নিতে এক নারী (৩৯), বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে এক পুরুষ, কেএমপির এক পুলিশ সদস্য (৪০), রায়েরমহলে এক পুরুষ (৪৫), নবী নগরে দুই জন পুরুষ (৩৬) ও (৫৫), ৪৪ কেডিএ এভিনিউ রোডে একজন পুরুষ, হাজী ইসমাইল রোডে এক পুরুষ (৪২) ও এক নারী (৬০), গাজী মেডিকেল কলেজের এক নারী (৪০) ও এক পুরুষ (৪২), পাইকগাছার কপিলমুনি গ্রামে দুই জন পুরুষ (৫৮) ও (৫২), কয়রা উপজেলার আমাদী গ্রামে এক বৃদ্ধ (৭০) ও সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার্স কোয়ার্টারে এক নারী (৩৬)।
খুলনা সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে জানা গেছে,
খুলনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৯২ জন। যার মধ্যে মারা গেছে ৯ জন, সু্স্থ্য হয়েছেন ৭৫ জন, বাকিরা এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া আজ বুধবার ৯৭ টি পজিটিভ নমুনার মধ্যে কয়েকটি ফলোআপ বাদে প্রায় ৯০ জনের অধিক নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
ইতোপূর্বে খুলনায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ১১ জুন থেকে নগরীর দোকানপাট বন্ধ, ফুটপাথে কোন হকার অবস্থান না করা, ইজিবাইকসহ অন্যান্য যান চলাচল সীমিত করা, মানুষের ভীড় ও মাস্ক ছাড়া চলাচল বরদাশত করাসহ একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিলো করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায়। তবে ১১ জুন থেকে এ পর্যন্ত খুলনায় করোনা সংক্রমনের মাত্রা মোটেও কমেনি, বরং অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে খুলনা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘খুলনার বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর হচ্ছে। এখন সংক্রমণ রোধ করতে হলে কঠোর লকডাউন ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই। আমি আগামী কালকে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করে এ বিষয়ে আলোচনা করবো। পবর্তীতে মিটিংয়ের মাধ্যমে খুলনাকে করোনার ছোবল থেকে বাঁচাতে ২১ দিনের কঠোর লকডাউন করার জন্য করোনা প্রতিরোধ কমিটির কাছে সুপারিশ করবো। কঠোর ভাবে লকডাউন না করা হলে এ ভাবে প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের রেকর্ড হবে।’