২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সকাল ১১:৪১

কানাডা-দুবাই ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরলেন ডা. মুরাদ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২১

  • শেয়ার করুন

বিতর্কিত রাজনীতিক সদ্য পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডার পর দুবাইয়ের দরজাও তার জন্য বন্ধ থাকায় উপায় না পেয়ে দেশেই ফিরেছেন।

রোববার বিকাল ৪টা ৫৪ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি কানাডার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেন। কিন্তু সেদেশে প্রবেশে ব্যর্থ হন তিনি। তাকে তুলে দেয়া হয় মধ্যপ্রাচ্যগামী একটি ফ্লাইটে। পরে তিনি দুবাই যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই দেশের ভিসাও না পাওয়ায় রোববার বিকেলেই দেশে ফিরবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

এদিকে মুরাদ হাসান যাতে দেশে ফিরতে না পারেন, এজন্য বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ করেন কয়েকজন। বিমানবন্দর এলাকার মূল ফটকের বাইরের সড়কে প্রায় ৩০-৪০ জন নিজেদের আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে মুরাদকে রুখে দেয়ার ঘোষণা দেন তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এসআই জানান, কিছু লোক প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তারা ১১টার দিকে চলে যায়। তারা বলেছে, বিকেলে আবার আসবে।

বিমানবন্দরে নামার পর সাংবাদিকদের এড়াতে মুরাদ হাসান আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হন। তিনি সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

এর আগে আজ (রোববার) সকালেই দুবাই থেকে তার ঢাকায় পৌঁছার কথা, কিন্তু সেই ফ্লাইটে তিনি আসেননি।একাধিক সূত্র জানায়, ডা. মুরাদ দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের (ইকে-৫৮২) বিমানে দেশে ফিরছেন সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটের ফ্লাইটে এমন খবরে সাংবাদিকরা ভোর থেকেই ভিড় করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।কিন্তু বিমানবন্দরের একটি সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করে, নির্ধারিত বিমানটি ল্যান্ড করলেও এই ফ্লাইটে ডা. মুরাদ হাসান আসেননি।

সূত্র জানায়, কানাডায় প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ার পর দুবাইয়ের ভিসা পাওয়ার চেষ্টায় করছিলেন ডা. মুরাদ।কিন্তু সেই চেষ্টায়ও ব্যর্থ তিনি।পরে দুবাইয়ের ভিসা না পেয়ে শেষমেশ আজ (রোববার) দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মুরাদ।

গত ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেছিলেন তিনি। এরপর কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলেও তাকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।সেখান থেকে তাকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়।কিন্তু দুবাইও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো সূত্রে ডা. মুরাদের অবস্থানের কথা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য মুরাদ হাসান একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পরে তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।

মুরাদ হাসানের কানাডা সফর নিয়ে সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সরকার তার সফর সম্পর্কে দূতাবাসকে কিছু জানায়নি। এর আগে তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কানাডা সফরকালে আমাদের অবহিত করা হয়েছিল। মুরাদ হাসান এখন সংসদ সদস্য। অনেক সময় সংসদ সদস্যরা কানাডা সফর করলে আমাদের জানান বিভিন্ন ধরনের প্রটোকল সুবিধার জন্য। কিন্তু মুরাদ হাসান তার সফর সম্পর্কে আমাদের কিছু জানাননি।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশনার বেনোই প্রেফনটেইন জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে করোনাকালীন ভ্রমণের বিষয়ে বেশকিছু বিধিনিষেধ আছে, যা দেশটিতে ভ্যালিড (বৈধ) ভিসা থাকা সব ভ্রমণকারীর জন্য প্রযোজ্য। তবে কোনো ব্যক্তির ভিসা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশটির ইমিগ্রেশন ও বর্ডার এজেন্সি।

সম্প্রতি এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইদিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।এ ছাড়া মুরাদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন