প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
তথ্য প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে। কোন নির্দিষ্ট দলের হাতে যেন ভোট ও দেশ আর চলে না যায়। তিনি বলেন, আমরা একটি তারুণ্য নির্ভর সমাজ দেখতে চাই। যুব সমাজকে সাথে নিয়ে আমরা চাঁদাবাজমুক্ত ও দখলদারমুক্ত দেশ গড়বো ইনশাআল্লাহ।
খুলনার কয়রা-পাইকগাছার প্রধান সমস্যা বেড়িবাধ সংকট নিরসনে বর্তমান অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, আপনারা শুরু করুন। জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে আর কোন দাবি করতে হবে না, বরং জনগনের সংকটগুলো খুঁজে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে।
এদেশের যুবকরা বৈষম্যমুক্ত যে সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল তেমন একটি সমাজ গড়তে তিনি সকলের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি বৃহস্পতিবার (২৬ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ কলেজ ময়দানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি পাইকগাছার গদাইপুর ফুটবল মাঠে এবং ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারো মাইলে পথসভায় বক্তৃতা করেন।
কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমীর আরও বলেন, মা-বোনদেরকে জামায়াত ভীতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত দেশ সেবার সুযোগ পেলে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথেই মা-বোনেরা দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবে। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কোন বাক্য এদেশে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই মিলেমিশেই দেশ গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ কোন গোষ্ঠী নয়, বরং ‘প্রত্যেকেই আমরা একেকজন যোদ্ধা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামীলীগ আমলের তিনটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে জামায়াতের আমীর বলেন, ১৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন, ১৮ সালে হয় নিশিরাতের নির্বাচন আর ২৪ সালে হয় ডামি নির্বাচন। সুতরাং এমন নির্বাচন আর দেশবাসী দেখতে চায়না।
ডামি নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু এদেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সে অপশাসন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করেছেন। আ’লীগ দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীীত দমন কমিশন এমনকি শিক্ষা ব্যবস্থা সব ধংস করেছে। মেয়েদের ইজ্জতের কোন গ্যারান্টি ছিল না। এসব বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ ফুসে উঠেছিল। রংপুরের আবু সাইদের মত অসংখ্য ছাত্র-জনতার বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ এদেশের মালিক ছিল না। তারা দেশের মালিক থাকলে দেশ ছেড়ে পালাতো না। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে পালায় না, বরং ভাড়াটিয়া খেলাপি হলে পালিয়ে যায়। আওয়ামীলীগের বেলায়ও তাই হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে গেলেও দেশকে শান্তিতে রাখতে দিচ্ছে না। চারিদিকে ষড়যন্ত্রের আগুন জ্বলছে।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বলি আওয়ামীলীগের ওপর সুবিচার করা হোক। কেননা তাদের ওপর সুবিচার করা হলেও তাদের শাস্তি হবে। তাদের বিচার হতে হবে এজন্য যে, আর যেন কেউ এমন দুর্বৃত্ত না হতে পারে।
আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের সন্তানরা। তাদের সে মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন জামায়াতের আমীর।
সামবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মাওলানা শহিদুল ইসলাম মুকুল।
সকালে তিনি পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। সকাল সাড়ে সাতটায় তিনি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আঠারোমাইল মোড়ে ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। এসময় তিনি বলেন, যারা গণহত্যা করেছে তাদের এ দেশের রাজনীতি করার অধিকার নেই। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী এদেশে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যে সমাজে খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতিসহ কোন অনিয়ম থাকবে না।
ফজরের পর থেকে শুরু হওয়া এ পথসভায় মুহূর্তের মধ্যেই জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এসময় জামায়াতের আমীরের উদ্দেশে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। তিনি সুন্দরবনের সুরক্ষা, কয়রায় একশ’ শয্যার হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংকের শাখা স্থাপনের দাবি জানান।
সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, আপনাদের সাথেই ছিলাম এবং সামনের দিনগুলোতে আপনাদের সাথেই থাকতে চাই। মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, আল কুরআনের সমাজ গঠনের জন্যই আমরা আন্দোলন করি।