প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২৩
ঢাকা অফিস: জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুটি অভিযোগে নয় বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় দেন। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন ২০০৪- এর ২৬ (২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছর ও ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাকে তিন কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে জোবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া তাকে জরিমানা ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তারেকের দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রীয় অনুকূল বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় পড়া শুরু করেন। ২৭ জুলাই এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এরপর রায়ের জন্য আদালত এ দিন ধার্য করেন। এদিকে রায়ে আইন অনুযায়ী দুইজনের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করেছিলেন দুদক কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি বলেন, দাখিল করা সম্পদ বিবরণী থেকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুই কোটি ২৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৫৮ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং তার ওই অপরাধে সহায়তার জন্য জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ৪২ সাক্ষী উপস্থাপন করেছি। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা এ অপরাধটা প্রমাণ করতে পেরেছি এবং আইন অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ ১৩ বছরের শাস্তি দাবি করেছি। ২৪ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওইদিন সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। মামলাটিতে মোট ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ১৩ এপ্রিল এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত। এরপর ২১ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন আদালতে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ জহুরুল হুদা। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। গত বছর এ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রুল খারিজ করেন হাইকোর্ট।
আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি: এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এই ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কেউ আহত না হলেও আদালত প্রাঙ্গণে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এর আগে এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। দুই পক্ষকেই একে অপরের বিরুদ্ধে স্লোগান নিতে দেখা যায়। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। দুপুর পৌনে ৩টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। তবে দুপুর পৌনে ৩টা পর্যন্ত তাদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এদিকে রায় ঘোষণার পরপরই আদালতের সামনে বিক্ষোভ ও জুতা মিছিল করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে এ বিক্ষোভ ও জুতা মিছিল করেন তারা। এ সময় আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরাও বিক্ষোভ-মিছিল করেন। এতে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।