২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,দুপুর ২:৪৬

আপিল নিষ্পত্তির আগেই দুই জনের ফাঁসি কার্যকর, তোলপাড়!

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২১

  • শেয়ার করুন

আপিল নিষ্পত্তির আগেই দুজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটেছে দেশে। দণ্ড কার্যকরের চার বছর পর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আপিল শুনানির। ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে করা আপিলটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হলে আইনজীবী স্বজনদের কাছ থেকে জানতে পারেন, চার বছর আগে ২০১৭ সালেই দণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর কখনোই আপিল শুনানি নিষ্পত্তির আগে সম্ভব নয়। সেটি কীভাবে হলো, তা নিয়ে বিস্মিত সংশ্লিষ্টরা।

এ দুই আসামি হলেন আবদুল মকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ূ। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। অথচ গতকাল বুধবার ছিল তাদের আপিল শুনানির দিন।প্রায় চার বছর আগে কার্যকর হওয়া ওই দুই ব্যক্তির দায়ের করা আপিল বুধবার (৩ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ১১ নম্বর ক্রমিকে ছিল। কিন্তু মামলার শুনানি হওয়ার আগেই জানা যায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে। তখন ওই বিষয়ে আর শুনানি হয়নি। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে এই তথ্য সঠিক নয়।
আসামিদের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান জানান, আমি আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানির জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এর কয়েক সপ্তাহ আগে মামলাটি শুনানি করে দেওয়ার জন্যে সুপ্রিম কোর্টের অপর আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির আমাকে বলেন। তারই পরামর্শে আমি মামলাটি শুনানির জন্য ওকালতনামা নেই। এরপর এসে তিনি আমাকে ফোন করে জানান, মামলার দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে। এর আগে আমি জানতাম না যে আসামিদের দণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে।

তবে এই তথ্য সঠিক নয় দাবি করে খুলনা বিভাগের কারাকর্তৃপক্ষের ডিআইজি সগীর মিয়া জানান, বিচারক সব প্রক্রিয়া শেষ করেই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
বিচারিক আদালতে ২০০৮ সালে ফাঁসির রায়ের পর ২০১৩ সালে হাইকোর্ট দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিল। পরে দুই আসামির আপিল আবেদন আপিল বিভাগ ২০১৬ সালে খারিজ করে দিয়ে ফাঁসির রায় বহাল রাখেন। এরপর ২০১৭ সালে আইনি সব প্রক্রিয়া শেষে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

আইনজীবীরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমতির প্রয়োজন হয়। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন হওয়ার পর তা কার্যকর করতে আরও কিছু প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়। তবে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলার কোনো পক্ষ যদি আপিল দায়ের করে সে ক্ষেত্রে তা নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে।
অথচ চিরাচরিত সেই নিয়মের বাইরে গিয়ে আপিল নিষ্পত্তির আগেই চুয়াডাঙ্গার মোকিম ও ঝড়ু নামে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। যদিও বিষয়টি শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) শুনানির জন্য ছিল।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, আসামি মোকিম ও ঝড়ুর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন একই এলাকার সাবেক মেম্বার মো. মনোয়ার হোসেন খুন হন। ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো. অহিমউদ্দিন বাদি হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে। পরে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, দুইজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২।

মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন- একই ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়ু।

এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। মামলার ডেথ রেফারেন্স নাম্বার ছিল ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করেন। বাকি আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট।
পরে মোকিম (আপিল নং- ১১১/২০১৩) ও ঝড়ু (আপিল নং- ১০৭//২০১৩) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। তখন মোকিমের পক্ষে আপিল মামলাটি তদারকির দায়িত্ব পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির। এরপরও দীর্ঘ আট বছর চলে গেছে। সম্প্রতি আপিল আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।

মামলাটি শুনানির জন্য তালিকায় ওঠার পর দরিদ্র মোকিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, আপিল নিষ্পত্তির আগেই ২০১৭ সালে মোকিমের ফাঁসি কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। অপর আসামি ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির নিজেও মামলা তদারকি করতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করলেও। কারা কর্তৃপক্ষ তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন।

হুমায়ুন কবির জানান, বিচারপ্রার্থী মোকিম কনডেম প্রিজনার ছিলেন। বিচারপ্রার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছি, কনডেম প্রিজনার মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড এরইমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। মূলত মোকিম ও ঝড়ুর পরিবার খুবই দরিদ্র। তাই তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরা সেভাবে মামলার বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারেননি। সে সামর্থ্যও তাদের ছিল না।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন