২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,রাত ৩:২৩

শুধুমাত্র মে মাসেই ভারতে ‘অজ্ঞাত কারণে’ ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২১

  • শেয়ার করুন

তথ্য ডেস্কঃ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতের সব কিছু যেনো এলেমেলো করে দিয়েছে। এমনকি মন্ত্রীসভায় বড় ধরণের পরিবর্তন আনা হয়েছে। অন্যদিনে করোনায় মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকে সমালোচনার মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এবার জানা গেলে নতুন এক ভংঙ্কর তথ্য।

ভারতের করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে মে মাসে দেশটিতে তিন লাখ লোকের ‘অজ্ঞাত কারণে’ মৃত্যুর বিষয়টি সে প্রশ্নকে আরও শক্তিশালী করেছে।

আনন্দবাজার বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় যখন ভারতে টালমাটাল অবস্থা, সেই সময় এপ্রিল এবং মে মাসে এমন কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা নেই।

সরকারি পরিসংখ্যানেই তাদের নামের পাশে মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোথাও ‘জ্বর’ এবং কোথাও ‘অজ্ঞাত কারণ’ লেখা রয়েছে।

শুধু তাই নয়, শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাকে যখন করোনার উপসর্গ হিসেবে ধরা হচ্ছে, সেই সময় শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ নিয়েও বহু মানুষ মারা গিয়েছেন। কিন্তু তাদের করোনা পরীক্ষা হয়েছিল কিনা, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে।

ভারতের হেল্‌থ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এইচএমআইএস) প্রায় দুই লাখ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যাবতীয় পরিষেবা এবং কাজকর্মের হিসাব রাখে। আর তাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের কভিড পরিসংখ্যান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এইচএমআইএস’র তথ্য অনুযায়ী, মহামারীর আগে ২০১৯ সালের মে মাসে যত জন মানুষ মারা গেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন ২০২১ সালের মে মাসে তার চেয়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বেশি মারা যান।

শুধু তাই নয়, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মে মাসে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৭৭০ মানুষ। ওই একই মাসে অজ্ঞাত কারণে তার প্রায় আড়াই গুণ বেশি মানুষ মারা গেছেন।

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ওয়েবসাইটে মূলত গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। তবে কিছু বেসরকারি এবং শহরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তথ্যও রয়েছে সেখানে।

অনেক ক্ষেত্রেই শহরাঞ্চলের মৃত্যুর নথি যথাসময়ে জমা পড়ে না তাদের কাছে। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর সনদ মিলিয়ে আলাদা হিসাব করা হয়। কিন্তু করোনা হানা দেওয়ার পর তাদের পরিসংখ্যানেই আকাশ-পাতাল ব্যবধান দেখা গেছে।

করোনা হানা দেওয়ার আগে ২০১৯ সালে প্রত্যেক মাসে দেশে গড়ে দুই থেকে দুই লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে তা বেড়ে ৩ লাখ ১০ হাজারে পৌঁছায়। মে মাসে তা আরও বেড়ে হয় ৫ লাখ ১১ হাজারে যা ২০২০ সালের মে মাসের তুলনায় যা ১৭৫ শতাংশ বেশি। আর ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় বেশি প্রায় ১৫০ শতাংশ।

শুধু তাই নয়, মে মাসে ৩ হাজারের বেশি সন্তানসম্ভবা নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে যা ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় ৮২ শতাংশ বেশি।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মে মাসে দেশে প্রায় ৪ লাখ ৯২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজারের মৃত্যুর কারণই জানা যায়নি। মৃত্যু সনদে তাদের নামের পাশে ‘অজ্ঞাত কারণে মৃত্যু’ লেখা রয়েছে।

বাকিদের অধিকাংশের নামের পাশে মৃত্যুর কারণ লেখা রয়েছে জ্বর এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা। মৃতদের কারও করোনা পরীক্ষা হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে কোনো তথ্য দেওয়া নেই।

ছত্তিশগড়ের গ্রামীণ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা যোগেশ জৈন বলেন, ‘এই সব মৃত্যুকে কভিডে মৃত্যু হিসাবেই ধরা উচিত। মে মাসে যখন করোনায় গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় নিশ্চয়ই ম্যালেরিয়ায় এত লোকের মৃত্যু হয়নি।’

হিসাবের গরমিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কভিডে মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেন্দ্র শুধু যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় এনে তা প্রকাশ করে। যাবতীয় তথ্য আসে রাজ্য সরকারগুলোর কাছ থেকে। ফলে সেই সব হিসাবে গণ্ডগোল থাকলে, কেন্দ্রের প্রকাশিত হিসাবেও গরমিল থাকতে বাধ্য।’

ভারতে করোনায় মৃত্যু কমিয়ে দেখানো হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও একাধিকবার অভিযোগ সামনে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকার যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ। মহামারীতে হিসাবের ‘সামান্য ভুল’ হয়ে থাকতে পারে বলে দাবি তাদের।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন