প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২২
বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আগের দিন বিভাগীয় শহর খুলনাকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা এবং বিভিন্ন উপজেলা এমন কি সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে । দুই দিন আগে থেকে সড়কপথে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই কারণে আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে পদব্রজে মিছিল করতে করতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এগিয়ে যাচ্ছেন সমাবেশস্থলের দিকে। গতকাল সন্ধ্যার পরপরই অনেকে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছেন।
খুলনা রেলস্টেশন, স্টেশন রোড, কেডি ঘোষ রোড, পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলো মোড়, ফেরিঘাট মোড় লোকে লোকারণ্য। সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছেন। রাত ১২টার আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে বিএনপির সমাবেশস্থলের আশপাশের জায়গা।
চারিদিকে শুধু লোক আর লোক। কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন, কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছেন। আবার অনেকেই গোল হয়ে প্রতিবাদী সংগীত গাইছেন।
বেশিরভাগ নেতা-কর্মী ট্রেনে ও ট্রলারে করে আগের রাতেই সমাবেশস্থলে হাজির হন। অনেকে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এসেছেন। রাতে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সমাবেশ স্থলের রাস্তায় আর ফুটপাতে প্লাস্টিকের বস্তা-পাটি পেতে ঘুমিয়েছেন। কাউকে কাউকে দেখা গেছে খবরের কাগজ বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
সকালেও অনেকে সেখানে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে। দলের বিভিন্ন নেতার পক্ষ থেকে সকালের নাস্তা দেওয়া হচ্ছে। খাবার ও পানীয় সরবরাহ করা হয়েছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা অভিযোগ করে বলেন, শনিবার খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপি বিভাগীয় গণসমাবেশ ডেকেছে।
এই গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের আসা ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে বাস, লঞ্চ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন খুলনা, পদব্রজে সমাবেশ মুখী বিএনপি নেতাভোগান্তিতে পড়েছে।হাজার হাজার নেতাকর্মীরা ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে ও পায়ে হেঁটে খুলনা সমাবেশস্থলে এসেছেন।
এসএম শফিকুল আলম মনা আরো বলেন একটা সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার এবং পুলিশের এমন তাণ্ডব খুলনাবাসী কখনো দেখিনি। পথে-পথে নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। আটক করা হচ্ছে। ট্রেনে যারা সমাবেশে এসেছে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এভাবে সমাবেশ ঠেকানো যাবে না। শত বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশের এক দিন আগেই নেতাকর্মীরা খুলনায় প্রবেশ করেছে। দূর-দূরান্ত থেকে আজও আসছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতা খুলনায় পৌঁছেছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সম্পন্ন করতে সিকিউরিটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়া সমাবেশের সময় ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারি থাকবে। পাশাপাশি সমাবেশের শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে ৪০০ স্বেচ্ছাসেবক।
উল্লেখ্য, চাল-ডাল-তেল-গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, খুন-গুম, দুর্নীতি-দুঃশাসনের প্রতিবাদ এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, সংসদ বিলুপ্ত ও সরকার পতনের দাবিতে শনিবার খুলনায় বিএনপির তৃতীয় বৃহত্তর বিভাগীয় সমাবেশ ডাকা হয়েছে। নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে দুপুর ২টা থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে।
বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও খুলনার গণসমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতারা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তৃতা করবেন।