প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২১
প্রকাশিত:
সীমন্ত ব্যুরো প্রধান, সাতক্ষীরা: সরকার প্রানঘাতী (কোভিড-১৯)করোনা ভাইরাস সংক্রমন
প্রতিরোধে কঠোর লকডাউন ও নিষেধাজ্ঞা প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থল সীমান্তের বৈধ-অবৈধ পথে গমনাগমন
অনুপ্রবেশ বন্ধ ঘোষনা দিলেও অঘোষিতভাবে খোলা রয়েছে সীমান্ত নদীর অবৈধ চোরাই
নদীপথ।ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে সাতক্ষীরার দক্ষিণ-পশ্চিম হাঁড়দ্দহা সীমান্ত নদী ইছামতীর নদীপথ
এখন চোরাচালান ব্যবসার শীর্ষে। স্থানীয় প্রভাবশালী ঘাটমালিকরা ইছামতী নদীর অভ্যন্তরীন নদীপথ
মাদক বাণিজ্য পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। বাংলাদেশ-ভারতের চোরাচালানী মাফিয়া ডন
ক্যাডারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এবং স্থানীয় ঘাট মালিকদের সহায়তায় ইছামতী নদীর উপকূলে গড়ে
উঠেছে মাদক বাণিজ্যের বিশাল নেটওয়ার্ক। করোনার ক্রান্তিকালকে পাথেয় করে স্থলপথ ও নদীপথ এখন
আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানীদের মাদক পাচারের নিরাপদ রুট। হাঁড়দ্দহা সীমান্তের প্রভাবশালী ঘাট
মালিকদের সঙ্গে শীর্ষ মাদক চোরাচালানীরা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ গোপন সখ্যতা স্থাপন করে সীমান্ত নদী
ইছামতীর অভ্যন্তরীণ নদীপথ দিয়ে ভারত থেকে নির্বিঘেœ পাচার করে নিয়ে আসছে মাদক বাণিজ্যের
বিরাট চালান। সীমান্ত নদী ইছামতীর উপকূলে গড়ে ওঠা শতাধিক মাদক বাণিজ্য কেন্দ্রে ভারত থেকে
পাচার হয়ে আসা মাদকের চালান সংরক্ষন করে রাখা হয়। এখান থেকে কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর
রাত পর্যন্ত মাইক্রো, প্রাইভেটকার, পিকআপ, মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহনযোগে মাদকের চালান
দেশের জেলা, বিভাগ ও রাজধানীতে পৌঁছে দেওয়া হয়। সীমান্তের নদীপথে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা
মাদক দ্রব্যের মধ্যে ফেনসিডিল,ইয়াবা, মদ, গাঁজা ও প্যাথিডিন ইনজেকশন অন্যতম।এর সাথে আসছে
নেশাজাতীয় ঘুমের কার্টুনভর্তি ট্যাবলেট। সাতক্ষীরার শীর্ষ চোরাকারবারীদের মদদে দক্ষিণ-পশ্চিম
হাঁড়দ্দহা সীমান্তে ইছামতী নদীর চোরাই নদীপথ (চোরাই ঘাট) পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে
সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া হাঁড়দ্দহা সীমান্তের মৃত নেছারউদ্দীন সরদারের ছেলে ফজলুর
রহমান (ফজলু) এবং পদ্মশাঁখরা গুচ্ছ গ্রামের আলী গাজীর পুত্র আব্দুল্লাহ গাজী (আব্দুল্লাহ)।ঘাটমালিক
ও মাদক চোরাচালানীরা মাদক বাণিজ্যের কালো টাকায় গড়ে তুলেছে নিজ এলাকায় আলীশান ভবন।
সরেজমীনে হাঁড়দ্দহা সীমান্তে গিয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট থেকে
জানা যায়, হাঁড়দ্দহা সীমান্ত নদী ইছামতীর নদীপথ ঘাট মালিকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভারত থেকে
মাদক বাণিজ্যের চালান পাচার করে নিয়ে আসার কাজে রয়েছে দক্ষিণ পাড়া হাঁড়দ্দহা সীমান্তের
আনসার আলী গাজীর পুত্র চোরাকারবারী সিরাজুল ইসলাম, রবিউল বদ্দীর পুত্র আবুল হাসান (পলাশ),
রেজাউল সরদারের পুত্র ইব্রাহিম (বাচ্চা), দ্বীন মোহাম্মাদের পুত্র সাইদ হোসেন, মৃত রিয়াজউদ্দীন
সরদারের পুত্র মুসা, মৃত নেছারউদ্দীন সরদারের পুত্র ময়না, মৃত ছদরউদ্দীনের পুত্র আব্দুল্লাহ ,রেজো সরদারের
পুত্র সুমন হোসেন, খায়ের আলীর পুত্র আশরাফুল ইসলাম, ঘাটমালিক ফজলুর রহমানের পুত্র খোকন এবং
জোহর আলীর পুত্র খালিদ হোসেন। সূত্রটি নিশ্চিত করে আরো জানায়, স্থানীয় চোরাকারবারীরা নদীপথে
পাম্পের বালিশের ওপর শারীরিক ভারসাম্য রেখে ভাসমান অবস্থায় চলে যায় ভারত ভূখন্ডে। এরপর নদীপথের
ঘাটমালিক আব্দুল্লাহ ও ফজলুর মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সবুজ সংকেত পেলে তারা
পুনরায় নৌকাযোগে বা ভাসমান অবস্থায় মাদকের চালান পাচার করে নিয়ে আসে হাঁড়দ্দহগা সীমান্ত
এলাকায়। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি’র নজর এড়িয়ে আবার কখনো সখ্যতা গড়ে তুলে নদীপথের
ঘাট মালিক আব্দুল্লাহ ও ফজলু এখন মাদক বাণিজ্যের কালো টাকায় কোটিপতি। এছাড়া আলোচিত
এই দুইজন ঘাটমালিক সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে মাদক চোরাকারবারীদের
নিকট থেকে আদায় করে মোটা অঙ্কের উৎকোচ, এমন অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কথিত এসব
চোরাই ঘাটমালিক ও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। মামলায় পুলিশের গ্রেফতার
এড়াতে নিজস্ব আলীশান বাসভবন ত্যাগ করে স্থানীয় ও দূরবর্তী মৎস্যঘের খঁটিতে রাত যাপন করে তারা।
যে কারণে, পুলিশ তাদের নিজস্ব বাসভবনে অভিযান চালিয়েও আটক করতে সক্ষম হয় না।উল্লেখ্য যে,
সম্প্রতি হাঁড়দ্দহা দক্ষিণ পাড়া থেকে শীর্ষ চোরাচালানী হাজী মন্টুকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা
পুলিশ। এদিকে সীমান্ত নদীপথে মাদক চোরাচালান সম্পর্কে জানতে চাইলে হাঁড়দ্দহা ইউপি সদস্য
আব্দুল গণি জানান, তিনি শুনেছেন দীর্ঘদিন হাঁড়দ্দহা ন’কোনা সীমান্ত নদীপথ দিয়ে ভারত থেকে
মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালানী পণ্য পাচার হয়ে আসে। এদিকে পদ্মশাঁখরা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার
হাবিলদার জাকির হোসেনের নিকট এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের সীমানা (এরিয়া)
অন্তর্ভুক্ত হাঁড়দ্দহা ইছামতী নদীপথ দিয়ে কোনো চোরাচালান কার্যক্রম হয়না। সীমান্তে মাদক ও
চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে আছে।