প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
ঝালকাঠিতে এমভি অভিযান-১০ যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ৪০ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক জহর আলী। এছাড়া অগ্নিদগ্ধ ৭০ জনকে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদের মধ্যে ৯০ ভাগ দগ্ধ ১৬ জনকে ঢাকায় পাঠানো করা হয়েছে। আর যারা ভর্তি রয়েছেন এদের বেশিরভাগ ৫ ও ১০ ভাগ দগ্ধ হওয়ায় শঙ্কামুক্ত বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম। এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক লঞ্চের সকল স্টাফ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক যাত্রী ও তাদের স্বজনরা বলেন, আকস্মিকভাবে ইঞ্জিনরুম থেকে আগুনের লেলিহান শিখা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আগুন ও এর সাথে ধোয়ায় লঞ্চ আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে প্রাণ বাঁচাতে অনেকই লঞ্চ থেকে নদীতে লাফ দেয়। এ সময় লঞ্চের ভেতরে থাকা যাত্রীরা দিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। তাদের ধাক্কায় ও পায়ের নিচে পদদলিত হয়ে অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যাত্রীরা দিশেহারা হয়ে ডাক-চিৎকার দিতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে যে যেভাবে পেরেছে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালিয়েছে। এতে অনেকে তাদের স্বজনদের রেখে নদীতে ঝাপ দেয় বলেও জানান তারা।
নিচতলার ইঞ্জিনরুম সংলগ্ন এলাকায় যে সকল যাত্রীরা ঢাকা থেকে জায়গা নিয়ে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তারাই বেশি দগ্ধ হন। এ সময় কয়েকজনকে শরীরে আগুন নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আমেনা বেগম নামের এক যাত্রী জানান, তার সাথে আরও জন স্বজন ছিল। আগুন লাগার সময় তিনি টয়লেটে ছিলেন। টয়লেট থেকে বের হয়ে আগুন এবং ধোয়া দেখে তিনি প্রাণে বাঁচতে নদীতে ঝাপ দেন। এরপর সাঁতরে তীরে যাওয়ার পর সেখানকার বাসিন্দারা তাকে তুলে আনেন। তবে তার সাথে থাকা চার স্বজনের খোঁজ তিনি এখনো পাননি।
আমিনুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, তিনি ইঞ্জিনরুম যেখানে তার ওপরে দোতালার ডেকে অবস্থান করছিলেন। আগুন লাগার সাথে সাথে ডেক গরম হয়ে চারিদিক ধোয়া আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে করে তিনিও আত্মরক্ষার্থে ডেকের পাশের পর্দা সরিয়ে দেন। এরপর লঞ্চের সাথে বাঁধা দড়ি বেয়ে নিচে নেমে নদীতে ঝাপ দিয়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন। ওই সময় দুই শিশুকেও তিনি রক্ষা করেন।
আমিনুল আরও জানান, তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে ওই দুই শিশুকে হস্তান্তর করে আবার মেডিকেলে ছুটে আসেন যাত্রীদের অবস্থা দেখার জন্য। তিনি নিশ্চিত যে, ইঞ্জিন বিস্ফোরিত হয়ে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ইঞ্জিনরুমের ২ জন স্টাফ নিহত হয়েছে বলে তিনি শুনতে পেয়েছেন। তবে তাদের লাশ এখনো শনাক্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই একজন স্টাফকেও পাওয়া যায়নি। আর যারা ছিলেন তারা যাত্রীবেশে সটকে পড়েছে বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। তারপর লঞ্চের মালিকের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন নলছিটি থানা পুলিশ।
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ৭০ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া আশঙ্কাজনক ১৬ দগ্ধ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিদের ৫ থেকে ১০ ভাগ দগ্ধ রয়েছে। তারা শঙ্কামুক্ত বলে দাবি করেন তিনি।
হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অর্ধশতাধিক চিকিৎসক আনা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকেও একটি টিম চিকিৎসার জন্য রওয়ানা হয়েছে। চিকিৎসা ও ওষুধের কোনো সমস্যা নেই বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
ঘটনাস্থলে থাকা কোস্টগার্ডের বরিশাল অঞ্চলের স্টেশন অফিসার লে. কর্ণেল আহমেদ অনাবিল বলেন, লঞ্চের ইঞ্জিন বিস্ফোরণ থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। তবে কি কারণে এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক কামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট আগুন নেভানোসহ উদ্ধার কাজ করছে। লঞ্চটির ইঞ্জিনকক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জহর আলী বলেন, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৭০ জনকে বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে ইঞ্জিনরুম থেকে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত।