প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২১
খুলনায় মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গোয়েন্দা শাখার এসআই মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে।
এছাড়া ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে, ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আদালত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তার মেয়ের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।
খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তারা হোটেল সুন্দরবন পরিদর্শন এবং হোটেলের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গে তারা বলেছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, প্রত্যক্ষদর্শী ওই নারীর মেয়েকে (১১) বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর হাকিম আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এসআই জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে খালিশপুর জোনের সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়া বৃহস্পতিবার এসআই জাহাঙ্গীরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, তিনি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন। দুয়েকদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
খুলনা থানার ওসি জানান, আদালতের অনুমতি নিয়ে এসআই জাহাঙ্গীরকে খুমেক হাসপাতালে নেওয়া হবে। সেখানে তার শরীরের বিভিন্ন আলামত ও ডিএনএ নেওয়া হবে।
হোটেল সুন্দরবনের কর্মচারী গোলাম মোস্তফা জানান, এসআই জাহাঙ্গীর মাঝেমধ্যে এই হোটেলে আসতেন। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে মা-মেয়ে যে কক্ষে ছিলেন ওই কক্ষের দরজায় গিয়ে নক করেন। তারা দরজা খুলে দেওয়ার পর তাকে (হোটেল কর্মচারীকে) মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর কক্ষের ভেতরে কী ঘটেছে তা তিনি দেখেননি। তবে ওই নারীর চিৎকারে হোটেলের লোকজন নিচতলার মেন গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, ধর্ষণের শিকার নারীকে ওসিসিতে ভর্তির পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে মানসিক কাউন্সিলিং দেওয়া হয়। তার শরীর ও পোশাক থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহসহ ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার এক নারী তার ১১ বছরের অসুস্থ মেয়ে ও ২৬ বছর বয়সী ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে মেয়েকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গত মঙ্গলবার বিকালে খুলনায় আসেন। রাতে তারা নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের সামনে হোটেল সুন্দরবনে ওঠেন। রাত আড়াইটায় এসআই জাহাঙ্গীর মা-মেয়ের কক্ষে গিয়ে মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করেন। এরপর হোটেলের কর্মচারীরা তাকে আটকে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বুধবার ভোর রাতে ওই নারী বাদি হয়ে খুলনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এসআই জাহাঙ্গীর বর্তমানে খুলনা জেলা কারাগারে রয়েছেন। জাহাঙ্গীর চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মো. আতিয়ার রহমানের ছেলে। ঘটনার সময় এসআই জাহাঙ্গীর মাদকাসক্ত ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।