২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,সকাল ১১:৪৯

মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানীর স্বর্গরাজ্য ভোমরা স্থলবন্দর

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১

  • শেয়ার করুন

এম জিয়াউল ইসলাম জিয়া,ভোমরা(সাতক্ষীরা):

শতাব্দীর নয়া আতঙ্ক দূর্ণীতি। ভয়াবহ দূর্ণীতির প্রভাব বিস্তারে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানীর স্বর্গরাজ্য সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। দূর্ণীতিবাজ সিএন্ডএফ এজেন্টদের স্বার্থসিদ্ধির গ্যাঁড়াকলে পড়ছে দেশের কিছু আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান। শীর্ষ চোরাকারবারী সিএন্ডএফ এজেন্টদের আর্থিক সাশ্রয় ভোগের প্রলোভণে পড়ে প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এসব বিত্তশালী আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান। অসাধু কাষ্টমস কর্মকর্তা ও দূর্ণীতিপরায়ন সিএন্ডএফ এজেন্টদের পরিকল্পিত যোগসাজসে ভারত থেকে আসছে শত শত ট্রাকে মিথ্যা ঘোষণার অবৈধ পণ্য। দেশের বিত্তবান আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক লাভে খুশি করতে সিএন্ডএফ এজেন্টদের অহরহ চলছে অনিয়ম, দূর্ণীতি আর রাজস্ব ফাঁকির আমদানী বাণিজ্য। ভোমরা বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় অবৈধ পণ্য আমদানীর অভিযোগে সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স মামুন ট্রেডার্সকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে ভোমরা কাষ্টমস প্রশাসন। এ কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের বগুড়া সদরের মেসার্স সিদ্ধার্ত এন্টারপ্রাইজ ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স মামুন ট্রেডার্সের মাধ্যমে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ক্যাপসিকাম আমদানীর লক্ষ্যে একটি এলসি বা ঋণপত্র খোলে। (যার এলসি নং- ০০০০৩২০১২১০১১০০৯, বিএল নং-অ১৭১১৬৬)। সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স মামুন ট্রেডার্স গত ১০ই জুলাই ২০২১ ভারত থেকে ক্যাপসিকাম আমদানী ঘোষনার মূল দলিলাদি (যার বি/ই নং- ১৬৭৫৫) ভোমরা কাষ্টমসে দাখিল করে। মিথ্যা ঘোষনায় অবৈধ পণ্য আমদানীর খবর পেয়ে ক্যাপসিকাম বোঝাই ভারতীয় একটি ট্রাক (যার নং-ডবিøউবি-৪১-ডি-৬৯৮৩) বন্দর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে আটক করে কাষ্টমস প্রশাসন। প্রকৃতপক্ষে ভারত থেকে ঘোষণাপত্রে ৮১ প্যাকেজ অর্থাৎ ১৩৮৯.৯৬ কেজি ক্যাপসিকাম আমদানী ছাড়করনের লক্ষ্যে ভোমরা কাষ্টমসে মূল দলিলপত্র জমা দেয় সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স মামুন ট্রেডার্স। এরপর স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডে আটককৃত পণ্য চালানটি স্থলবন্দর সরকারী গোডাউনে সংরক্ষিত রাখার পর পণ্য চালানটির কায়িক পরীক্ষা করা হয়। অবৈধ আমদানীকৃত পণ্য চালানটি ভোমরা কাষ্টমসের সহকারী কমিশনার, ভোমরা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের প্রতিনিধি, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এর প্রতিনিধি, কাষ্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দাখিলকৃত ইনভয়েস ও প্যাকিং লিস্ট এর সাথে মিলিয়ে পণ্য চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হয়। প্রকাশ্যে এ কায়িক পরীক্ষায় ঘোষিত ১৩৮৯.৯৬ কেজি ক্যাপসিকামের স্থলে ১০৬০ কেজি ক্যাপসিকাম পায় কায়িক পরীক্ষণ কর্মকর্তারা। এছাড়া ঘোষণা বহির্ভূত ৩১২ ইউনিট বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ১ লক্ষ ২০ হাজার শলাকা সিগারেট (ইজিলাইট), ৭৬ প্রকার মেডিসিন, ৩ প্রকার ভ্যাকসিন, ২৩৪ ইউনিট শাড়ি, ৪৭ ইউনিট থ্রি-পিস, ৩৮ ইউনিট লেডিস পার্স, ১ ইউনিট বেবি পার্স ও ৪শ গ্রাম অনিয়ন হেয়ার জেল জব্দ করে কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ। জব্দকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রশাসন) আকবর আলী জানান, মেসার্স মামুন ট্রেডার্সের ঘোষিত পণ্যের ইনভয়েস মূল্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪১৬.৯৯ মার্কিং ডলার এবং শুল্কায়ন মূল্য দাঁড়ায় ৭২ হাজার ২৬৬ দশমিক ৯৬ টাকা। জড়িত রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৩৪৮ দশমিক ২২ টাকা। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় প্রাপ্ত পণ্যের শুল্কায়নের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৮৮ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪১৬ দশমিক ২২ টাকা। জড়িত রাজস্বের পরিমান ৬০ লক্ষ ৬ হাজার ৩২৩ দশমিক ৬০ টাকা, অর্থাৎ রাজস্ব ঝুঁকির পরিমান ছিল ৫৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৭৫ দশমিক ১৬ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ১৭/০৭/২০২১ তারিখে জারীকৃত এসআরও নং-২৩৭-আইন/২১৮/৩৯/শুল্ক, অনুযায়ী আলোচ্য পণ্য চালানে ঘোষনাকৃত ক্যাপসিকাম ছাড়া মোবাইল ফোন, মেডিসিন, ভ্যাকসিন, সিগারেট, শাড়ি, থ্রিপিস, লেডিস পার্স, বেবি পার্স ও অনিয়ন হেয়ার জেল ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানীযোগ্য নয়। এদিকে আমদানী নীতি আদেশ, ২০১৫-২০১৮ এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ২৬(৫১)(গ) অনুযায়ী মোবাইল ফোন আমদানীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন হতে আমদানী অনুমতিপত্র কাষ্টম দপ্তরে দাখিল না করে অবৈধভাবে ঘোষনা বহির্ভূত পণ্য আমদানী করা হয়েছে।এছাড়া অনুচ্ছেদ ২৬(২০) অনুযায়ী আমদানীকৃত সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বাংলায় সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর স্পষ্টভাবে মুদ্রিত থাকা দরকার। কিন্তু কায়িক পরীক্ষায় প্রাপ্ত সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে তা মুদ্রিত ছিল না। এছাড়া অনুচ্ছেদ ২৬(১৬) অনুযায়ী ঔষধ আমদানীর ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতিপত্র দাখিল ছাড়াই ঔষধ আমদানী করা হয়েছে। যা আমদানী নীতি আদেশ, ২০১৫-২০১৮ এর ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ২৬(৫১)(গ), ২৬(২০) এবং ২৬(১৬) এর শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। এদিকে সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানান, দাখিলকৃত দলিলপত্র কায়িক পরিক্ষণ প্রতিবেদন ও প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায় যে , দি কাষ্টমস এ্যাক্ট এর অধীনে সুস্পষ্ট অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ অপরাধ সংঘটনের দায়ে একই আইনের ধারা অনুসারে আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানে আমদানীকৃত পণ্যসমূহ রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্তকরণ সহ অর্থদন্ড আরোপযোগ্য। দি কাষ্টমস এ্যাক্ট লঙ্ঘন করে মিথ্যা ঘোষনায় পণ্য আমদানী করায় একই আইনের ধারা অনুসারে আমদানীকৃত পণ্য চালানটি কেনো রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স মামুন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না তার সুস্পষ্ট জবাব এ পত্র জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে দাখিল করার জন্য ভোমরা সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত শুনানিতে আগ্রহ থাকলে তাও দাখিলকৃত জবাবে উল্লেখ করার জন্য বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো জবাব পাওয়া না গেলে মামলাটি কায়িক পরীক্ষণ প্রতিবেদনসহ প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন