২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,রাত ৪:১৫

মানবিকতার এক নাম সালমা খাতুন।

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১

  • শেয়ার করুন


মিলন হোসেন বেনাপোল।
মানবিকতার আর এক নাম বেনাপোলের এক অজো পাড়া গায়ের মেয়ে সালমা খাতুন। ছোট বেলা থেকেই মানবিকতার ছোয়া ছিল তার মধ্যে। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে কিছু করতে পারতেন না। চাষি পরিবারের সন্তান ছিলেন সালমা খাতুন। পিতার আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে অনেক কষ্ট করে লেখা পড়া করে মানুষ হয়েছেন তিনি। স্কুল জীবনে কখনো একবেলা খাবার জুটতো কখনো জুটতো না। ক্ষুধা পেটে নিয়েই তিন কিলোমিটার পায়ে হেটে স্কুলে যেতেন এবং সন্ধায় বাড়ী ফিরতেন তিনি। তখন থেকেই জানতেন ক্ষুধার জ¦ালা কতো! তখন থেকেই মনে মনে ভাবতেন কখনও মানুষের মতো মানুষ হতে পারলে গরীব ও ক্ষুধার্থ মানুষের পাশে থেকে কাজ করার।
এসএসসি পাশ করার পর নিজের পছন্দ মতো মধ্যবিত্ত ঘরের এক ছেলেকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরনায় ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর পাশ করেন। এখন তিনি স্বামীর সাথে যশোর রেল গেটে বসবাস করে। তিনি নিজে একজন ফিল্যান্সিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। বিয়ে হলেও তার মন পড়ে থাকে ওই সব গরীব ক্ষুধাথর্ মানুষের দিকে। চলার পথে তার নজর থাকতো রাস্তায় বসে থাকা গরীব, পাগল ও ক্ষুধার্ত পথ শিশুদের দিকে। পরে স্বামীর অনুপ্রেরনা ও আত্বীয় স্বজনের সহযোগীতায় ক্ষুধার্থ মানুষের মাঝে খাবার দেয়া শুরু করেন। প্রথম প্রথম প্রতিদিন ৪/৫ জন ক্ষুধার্থ মানুষকে খাবার দিতেন। পরে দেশে করোনা ভাইরাসে চারিদিকে লকডাউনে রাস্তার ক্ষুধার্থ মানুষের পাশে নতুন উদ্যোমে দাড়ানো চেষ্টা করেন। পরিচিত দু এক জনের সহযোগীতা ও নিজের অর্থ দিয়ে এখন তিনি সপ্তাহে ৩ দিন রেল ষ্টেশনে পড়ে থাকা ২৫ থেকে ৩০ জন ক্ষুধার্থ মানুষের মুখে একবেলা খাবার তুলে দেন। এ খাবার তিনি নিজ হাতেই রান্না করেন। কখনও সবজি ভাত কখনও মাছ ভাত আবার কখনও মাংস ভাত খাওয়ান তিনি। তার পরিবারের মানুষ যেদিন যা খেতেন সেই খাবারই রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকে খাওয়ান।

”আসুন মায়া বাড়ায়” নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পেইজ খুলেছেন তিনি।
অন্যন্যদের তেমন কোন আর্থিক সহযোগীতা না পেলেও তার এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়েই কাজ করছেন। তার মানবিকতার কাজে সহযোগীতা করছেন তার স্বামী,ছোট বোন ও মেয়ে।
সালমা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজ বাংলাকে বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে খুবই স্ট্রাগল করে পড়াশোনা করেছি। অনেক সকালে উঠে অনেক পথ পায়ে হেঁটে স্কুল করতে হতো। বাড়ি ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যেত। অজ পাড়ার নি¤œবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। তাই অনেক ক্ষুধা নিয়ে আমাকে স্কুল করতে হতো সারাদিন। সকালে কোনদিন খাবার জুটত, আবার কোনদিন জুটত না। তাই ক্ষুধার কষ্ট ছোটবেলা থেকেই বুঝেছি। এভাবে এইচএসসি পাস করি। তারপর নিজের ইচ্ছাতেই মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলেকে বিয়ে করি। বিয়ের পরে আমার হাজবেন্ডের অনুপ্রেরণা আর আমার অদম্য আগ্রহে স্নাতক, (প্রথম বিভাগ) ও স্নাতকোত্তর (প্রথম বিভাগ) শেষ করি। বিয়ের ঠিক পরেই আমি বুঝতে পারলাম আমার হাজবেন্ডের দানশীল মনোভাবের বিষয়টা। কারণ বিয়ের ঠিক পরেই আমার প্রতি আমার হাজবেন্ডের নির্দেশ ছিল কোন মানুষ খাবার চাইলে তাকে ফেরানো যাবে না। কথাটা শুনে আমার খুব ভালো লাগে। তখন থেকেই শুরু হয় ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়ানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
পরবর্তীতে রাস্তায় বের হলে শুধুই নজর থাকতো কারা অভুক্ত অবস্থায় আছে। রাস্তার পাগল, প্রতিবন্ধী, ভিখারি, পথশিশু এদেরকে খাবার দিতাম গোপনে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী। তারপর মনে হলো আমাকে দেখে কিছু মানুষ যদি এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসে তাহলে আরো কিছু অভুক্ত মানুষ খাবার পাবে। তাই ফেসবুকে কিছু ছবি আপলোড করি। এগুলো দেখে আমার বোন, আমার ভাসুর এবং আমার ননদ আমাকে কিছু কিছু টাকা দেন। এছাড়াও দু-একজন পরিচিত শ্রদ্ধাভাজন মানুষ আমাকে টাকা দেন। তখন আমার আগ্রহ আরো অনেকগুণ বেড়ে যায়।
আপাতত সপ্তাহে তিনদিন খাবার দিচ্ছি। ইচ্ছা আছে রাস্তায় পড়ে থাকা সকল গরীব, পাগল ও ক্ষুধার্থ মানুষের মুখে খবার দুলে দেয়ার।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজে ফ্রিল্যান্সিং করি। আমি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। একজন নারী আইটি, উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা পেয়েছি। আমার হাজব্যান্ড ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, যশোহর এর ইংরেজি লেকচারার। প্রথমে আমরা নিজেদের টাকায় শুরু করি। তারপর ২/১ জন কাছের মানুষের হেল্প পেয়েছি।

ভবিষ্যৎ ভাবনা কম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটা মহল্লাতে মহল্লাতে মানবিক পরিবার গড়ে তোলা যাতে কোন মানুষ অভুক্ত না থাকে। এছাড়াও অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের অধিকার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে।

প্রেরকঃ
মিলন হোসেন বেনাপোল
মিলন ৩১/০৭/২১
মোবাইল ০১৭১২২১৭১৪৩

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন