প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২১
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন আটক হয়েছেন। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ইকবালকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে তাকে শুক্রবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে নেওয়া হয় কুমিল্লা পুলিশ লাইনে। সেখানেই ইকবাল কোরআন রাখার কথা স্বীকার করেছেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মণ্ডপে কোরআন রাখার পর হনুমানের মূর্তি থেকে গদা সরিয়ে নেওয়ার কথাও পুলিশের কাছে বলেছেন ইকবাল। তবে কার নির্দেশে এই কাজ করেছেন, তা এখনও ইকবাল জানাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেপ্তারের পর থেকেই ইকবাল অসংলগ্ন আচরণ করছেন।
কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ লাইনে নেওয়ার পর থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট। কুমিল্লা জেলা পুলিশের ডিআইও মনির আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ইকবালের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
এরআগে, ইকবালের সহযোগী সন্দেহে ইকরামসহ অন্তত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে কুমিল্লা নগরীর শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারের সহকারী খাদেম হিসেবে পরিচিত হুমায়ুন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদও রয়েছেন। এ মাজারের মসজিদ থেকেই কোরআন নিয়ে মণ্ডপে রাখেন ইকবাল।
সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় পূজায় কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপাড়ের অস্থায়ী একটি পূজামণ্ডপে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে কয়েকট স্থানের সিসিটিভি’র ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে আসে। পরবর্তীতে সিসিটিভি’র ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ইকবাল হোসেন নামে এক যুবককে শনাক্ত করে পুলিশ। সেসব ভিডিও ফুটেজ পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমেরও হাতে এসেছে।
সিসিটিভির সেসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ৫০০ গজ দূরের দারোগাবাড়ি মাজারসংলগ্ন মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে মন্দিরে ঢোকেন ইকবাল হোসেন। অভিযুক্ত এই ইকবাল হোসেন কীভাবে, কখন মসজিদে যান এবং বের হন। এরপর মণ্ডপের দিকে যান এবং মণ্ডপ থেকে গদা হাতে ফেরেন তা ফুটেজে অনেকটা স্পষ্ট।
এরপর থেকে ইকবালকে আটকের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার থেকে তাকে আটক করতে সামর্থ হয়। পরবর্তীতে আজ শুক্রবার দুপুরের দিকে মাইক্রোবাসে করে কুমিল্লার পুলিশ লাইনে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইকবাল গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত এবং আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।