প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১
প্রকাশিত:
সীমান্ত ব্যুরো, সাতক্ষীরা:- মহামারী করোনার প্রাদূর্ভাবকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন চাকরি করার সুবাদে ভোমরা কাষ্টমসের এন্ট্রি শাখায় চলছে বাধ্যতামূলক ঘুষ বাণিজ্য। দূর্ণীতির প্রভাবে ঘুষ বাণিজ্য অব্যাহত রাখার চরিত্রে অটল এন্ট্রি শাখার শীর্ষ দুইজন উচ্চমান সহকারী হুমায়ুন ও রেদওয়ান। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমন ছড়িয়ে পড়লে দেশের সকল শিল্প কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সচল ছিল ভোমরা স্থলবন্দর। করোনাকালে বদলি কার্যক্রম স্থগিত থাকায় এ দুজন উচ্চমান সহকারীর কার্যকাল পূর্ন হয় এক বছরে। আমদানী বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ বিল অব এন্ট্রি পেপার জমা হয় এন্ট্রি শাখায়। পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে রয়েছে ঘুষ বাণিজ্যের বিল এন্ট্রির ভিন্নতা। ভারত থেকে ফল আমদানীর বিল অব এন্ট্রি পেপার প্রতি ৫শ টাকা, অন্যান্য আমদানী পেপার প্রতি ৩শ টাকা এবং দেশীয় পণ্য রপ্তানী কাজে ব্যবহৃত পেপার প্রতি দেড়’শ টাকা ঘুষ আদায়ে রয়েছে ব্যাপক প্রবণতা। দৈনিক ও সাপ্তাহিক চুক্তিতে ঘুষের টাকা পরিশোধ করতে হয় সিএন্ডএফ এজেন্টদের। এ ব্যাপারে এন্ট্রি শাখার দূর্ণীতির উপর পরিচালিত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, সিএন্ডএফ এজেন্টদের কাছ থেকে প্রতি বছর ১ কোটি টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হচ্ছে। এন্ট্রি শাখার উচ্চমান সহকারী কর্তাদের চাপে পড়ে দৈনিক বা সাপ্তাহিক চুক্তির ভিত্তিতে ঘুষ দিতে হয় সিএন্ডএফ এজেন্টদের। আমদানী বাণিজ্যের বিল অব এন্ট্রি পেপার রেজিস্টার বহিতে এন্ট্রি করা বাবদ স্প্রীট মানি বা ঘুষ না দিলে পেপার এন্ট্রি করাতে হয়রানীর শিকার হতে হয় সিএন্ডএফ এজেন্টদের। একাধিক ভুক্তভোগী সিএন্ডএফ এজেন্টদের নিকট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএন্ডএফ এজেন্টরা এন্ট্রি শাখার দূর্ণীতিবাজ দুজন উচ্চমান সহকারীর যাঁতাকলে পড়ে নিস্পেষিত হওয়ার ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করতে সাহস পায় না। বর্তমানে ভারত থেকে প্রতিদিন ৩শ আমদানী পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দর অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। ফলে পণ্য আমদানীর ক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক বিল অব এন্ট্রি পেপার রেজিস্টার্ড বহিতে এন্ট্রি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতি বিল অব এন্ট্রি পেপারে ৩শ টাকা ঘুষ আদায়ে ঘুষাংকের পরিমান দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকা, সপ্তাহে এর পরিমান হয় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, মাসে এই ঘুষাংকের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং বছরে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ টি ফলের গাড়ি প্রবেশ করছে বন্দরে। একটি বিল অব এন্ট্রিতে একটি ফলের ট্রাক আমদানী হয়। সেই অনুযায়ী ফলের গাড়ি প্রতি ৫শ টাকা হিসাবে প্রতিদিন আদায়ের পরিমান ৭ হাজার ৫শত টাকা, সপ্তাহে ৪৫ হাজার টাকা, মাসে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং বছরে ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হচ্ছে। এদিকে আমদানী বাণিজ্যের পাশাপাশি রপ্তানী বাণিজ্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের দেশীয় পণ্য ভারতে রপ্তানী হচ্ছে ৮০-৯০ গাড়ি। ফলে প্রতিদিন এন্ট্রি শাখায় জমা হচ্ছে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০টি বিল অব এন্ট্রি পেপার। রপ্তানী পণ্যের বিল অব এন্ট্রি প্রতি দেড়’শ টাকা হিসাবে প্রতিদিন ঘুষ আদায়ের পরিমান দাঁড়ায় ৭ হাজার ৫শ টাকা, সপ্তাহে এ অর্থের পরিমান দাঁড়ায় ৪৫ হাজার টাকা, মাসে এ অর্থের পরিমান দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা এবং বছরে এ অর্থের পরিমান হয় ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি বছর আমদানী ও রপ্তানী বাণিজ্যের বিল অব এন্ট্রি পেপার রেজিস্টার্ড এন্ট্রি বাবদ এন্ট্রি শাখার গোপন অর্থ তহবিলে জমা হয় ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। অবৈধভাবে আদায়কৃত টাকার দুই-তৃতীয়াংশ চলে যায় শীর্ষ দুজন উচ্চমান সহাকারীর পকেটে। বাকি টাকা চলে যায় এন্ট্রি শাখার অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এন্ট্রি শাখার উচ্চমান সহকারী হুমায়ুন ও রেদওয়ানের নিকট অবৈধ অর্থ আদায় ও নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, এন্ট্রি শাখায় সিএন্ডএফ এজেন্টদের নিকট থেকে কোনো অর্থ আদায় করা হয় না। এ ব্যাপারে ভোমরা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল অফিসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (ইন্সপেক্টর) শরিফুর রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি শুনেছেন, তবে তার নিকট সুনির্র্দিষ্ট কোন প্রমান নেই।