প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪
আবুল হাসান, মোংলা : সুন্দরবনকে ঘিরে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও বন বিভাগসহ পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িতদের সমন্বিত পরিকল্পনা অভাবে বার বার হোঁচট খাচ্ছে সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যহত হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রীক অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন।
যেহেতু সুন্দরবনের পরিবেশ পতিবেশ অত্যান্ত সংবেদনশীল, তাই এখানে ইকোট্যুরিজমের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ প্রয়োজন। যা তৈরীতে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের উদ্যেগ প্রয়োজন বলছে বনবিভাগ।
জানা গেছে, জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্যতার কারণে সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যতম পর্যটন স্পট থেকে স্বতন্ত্র। সুন্দরবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নাম। এছাড়াও বনভূমিটিতে রয়েছে নানা ধরনেরর পাখি, চিত্রাল হরিণ, কুমির, ডলফিনসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। তাই দেশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য একই সঙ্গে বিনোদন ও গবেষনার স্থান হয়ে উঠতে পারে সুন্দরবন। পরিবেশবিদরা বলছেন, ট্যুরিজম সেক্টরটাকে সুন্দর করে নিয়ন্ত্রন বা পরিচালনা করা যায় তাহলে এটা একটা বিরাট সম্ভাবনা সেক্টরে পরিনত হবে। এছাড়া সুন্দরবনে পর্যটককেন্দ্রিক নান্দনিক যেসব নৌযান রয়েছে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করা হলেও পর্যটন শিল্পে ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ন সম্পাদক মোঃ নুর আলম শেখ বলেন, ‘আর্ন্তজাতিক পর্যটন দিবসে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক যে বৈশিষ্ট্য এবং সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য প্রকৃতিকে রক্ষা করেই বাংলাদেশের ফুসফুস সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে। সুন্দরবনের আশপাশের যে গ্রাম আছে সেগুলোকে ইকোট্যুরিজম সেন্টারে পরিনত করতে হবে। এছাড়া সুন্দরবনে যেসব ট্যুরিষ্টরা প্রবেশ করে তারা যাতে বন্যপ্রাণীর ক্ষতি না করে, সুন্দরবনে প্লাষ্টিক দূষণ না করে পরিবেশ সতেচন থাকে সে ব্যাপারে একটি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারকে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে’।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডক্টর শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন কেন্দ্রিক পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে একদিকে দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধ হবে। অন্যদিকে এই শিল্পের সাথে জড়িত বিপুল জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তবে বনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং সুন্দরবন ভ্রমনের নীতিমালা কঠোরভাবে পালন করতে হবে। তানা হলে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পের মারাতœক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এছাড়া বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরন নিশ্চিত করতে হবে এবং পরিকল্পিতভাবে পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমনের ব্যবস্থা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
তবে সুন্দরবনের পর্যটন এলাকাগুলোতে পর্যটকবান্ধব অবকাঠামো না থাকা ও অনুমতিপ্রাপ্তীতে দীর্ঘ সুত্রিতায় ব্যহত হচ্ছে ইকোট্যুরিজম। বনবিভাগ জানিয়েছে ২০১৪ সাল ভ্রমণ নীতিমালা প্রনীত হয়েছে। যার আলোকে নতুন পর্যটন স্পট বাড়ানোর কাজ চলছে।
এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘২০১৪ সালের ভ্রমণ নীতিমালা অনুযায়ী সুন্দরবনে বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি পর্যটন স্পট বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই মূহুর্তে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে ১১টি ট্যুরিষ্ট স্পট আছে। সুন্দরবনে আগত পর্যটকরা সেখানে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছেন’।
তিনি বলেন, ‘পর্যটকরা সুন্দরবনে যতই আসুক না কেন তাদেরকে আমাদের ধরে রাখার মতো সক্ষমতা আছে। পরিবেশের ক্ষতি হবেনা এ ব্যাপারে বনরক্ষীদের বকোধিকবার প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী পর্যটকদের সেবা দেওয়া হবে’।