প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২০
করোনাভাইরাসের ভুয়া টেস্টে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়ায় অভিযুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদুল করিম সাহেদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফোন করেছিলেন। তিনি তদবিরের চেষ্টা করেন। তবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সাহেদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শুক্রবার রাজধানীতে নিজ বাস ভবনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার কাজের জন্য শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজছে তাকে। তবে তারও উচিত আত্মসমর্পণ করা।
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদুল করিম সাহেদ জালিয়াতির অভিযোগ এখন পলাতক রয়েছে। আত্মগোপনে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত এই প্রতারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, সাহেদ যেখানেই থাকুক পার পাবে না।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর ফোন করে সাহেদ তদবির করারও চেষ্টা করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সে আমাকে বললো আমার ওটা তো সিল করছে। জবাবে বলেছিলাম, আমি তো জানি না। “কেন সিল করছে? কেন সিল করছে? নিশ্চয়ই আপনি কিছু করেছেন। সাহেদ বলেছিল, আমাকে অ্যারেস্ট করলে? তখন বলেছি, সেটাও আমি কিছু বলতে পারব না। এরপর সাহেদ আর কোনো ‘যোগাযোগ করেনি’ বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে, সাহেদের বাবা সিরাজুল ইসলাম গতকাল করোনা নিয়ে মারা যান। আজ শুক্রবার সকালে তার দাফন হয়। যেখানে ছিলেন না পরিবারের কেউ। তার করোনা পজিটিভ ছিল।
হাসপাতালে ভর্তির পর প্রথম দুদিন বাবাকে দেখতে গেলেও রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর থেকে আর যাননি সাহেদ। এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার মারা যান তার বাবা।
প্রতারণা ছাড়াও রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ
সাহেদ শুধু প্রতারণা করেই ক্ষান্ত হননি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগ। এ ব্যাপারে সাহেদের সাবেক এক নারী সহকর্মী গণমাধ্যমকে বলেন, অনেক রকমের মেয়েরা আসতো। স্যারের রুমে মেয়েদের নিয়ে মারতো। আমি তার খারাপ চরিত্র দেখার পরেই চলে আসি।
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ, চেয়েছেন ব্যাখ্যা
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে প্রতারণার ঘটনা কীভাবে ঘটল তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এগুলো কী? কেমনে, কী করে? “জবাবে আমি বলেছি, আমি তো জানি না। একদিন দেখলাম দুটি হাসপাতাল কোভিডের জন্য উৎসর্গ করেছে।
“আমার কাছে সে একদিন বুক ফুলিয়ে কথা বলল। আমি বললাম, আমি তাহলে রোগী পাঠব। রোগী পাঠিয়েছি। কতজন ভালো হয়ে আসছে, তপন নামে আমাদের এক নেতা মারা গেছেন।”
রিজেন্ট হাসপাতাল থেকে কোভিড-১৯ এর ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, “এগুলো প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।”
করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার ‘প্রমাণ পেয়ে’ গত সোম ও মঙ্গলবার র্যাবের একটি দল উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতাল এবং তাদের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয়। এই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় র্যাবের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়।
মামলায় কোভিড-১৯ রোগীদের পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ, জাল জালিয়াতি, ভুয়া রিপোর্ট তৈরি, ভুয়া রিপোর্টকে খাঁটি বলে চালিয়ে দেওয়া এবং কোভিড- ১৯ রোগ সংক্রমণ বিস্তারে ভূমিকা রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় সাহেদসহ মোট ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজনকে দুই দিনের অভিযানের সময় গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। সাহেদসহ বাকিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।