প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪
তথ্য প্রতিবেদক : জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে গেছে খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনও অর্ধেক কাজই বাকী রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে কাজ ছেড়ে চলে গেছে ঠিকাদার। অভিযোগ রয়েছে যাবার আগে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অর্ধেকের বেশী টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে কাজ শেষ করার তোড়জোড় শুরু করেছে। বাদ দেয়া হয়েছে আগের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজকে। বর্ষার পরপরই নতুন ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে, কাজের নামে সড়কের বিভিন্ন স্থান খুঁড়ে ফেলে রাখায় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে এ মুহূর্তে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় খুলনা-কয়রা সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল উপকূলীয় জনপদের মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা।
মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ এর মালিক কাজী মোজাহারুল হক বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীনের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কাজের সাইট থেকে কৌশলে নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সওজ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে কয়েক দফা সময় বাড়ানোর সঙ্গে বরাদ্দও বাড়ানো হয়।
প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটির শুরুতেই বরাদ্দ ছিল ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। পরে তা বাড়িয়ে ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার টাকা করা হয়। এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছাড় করা হয়েছে।
সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিম কাওছার জানিয়েছেন, কয়েক দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির পর প্রকল্পের সর্বশেষ মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পুনরায় আবেদন করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৬৪.৫০ শতাংশ ভৌতিক অগ্রগতি ও ৫৭.০৫ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে। এ অবস্থায় তারা কাজ করবে না বলে ১৫ আগস্ট চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতার প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের শুরুতেই নানা অনিয়ম করে প্রতিষ্ঠানটি। তারা ৩০টি বাঁক সরলীকরণের কাজ বাদ রেখে কিছু স্থানে কার্পেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন করে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় সেসব স্থানে এরই মধ্যে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন বলেন, জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ৬৫ কিলোমিটারের এই সড়কের কাজ আগেও কয়েকবার পিছিয়েছে। নতুন করে আবারও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কাজ করতে না পেরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অস্বীকার করেছে। ফলে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন করে কাজ করার জন্য টেণ্ডার আহ্বান করা হবে। এর আগে জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সম্পন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হলেই ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজের জন্য অগ্রিম কোন টাকা প্রদান করা হয় না। তাই আগের ঠিকাদার কাজ না করে অনেক টাকা তুলে নিয়েছেন বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে তা সঠিক নয়। তার কাজের জন্য যে টাকা দেয়া হয়েছে তা সমন্বয় করা হবে। সে যদি আরও টাকা পায় তাহলে তাকে দেয়া হবে, আর যদি সে বেশী নিয়ে থাকে তাহলে তার কাছ থেকে অর্থ ফেরত নেয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।