১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,বিকাল ৩:০৯

খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক এযেন মৃত্যুর কূপে পরিনত হয়েছে

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২১

  • শেয়ার করুন

আট বছরেরও বেশি সময় ফেরিয়ে গেলেও একনেক বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পরও বাস্তবায়ন হয়নি

মোসলেহ্উদ্দিন তুহিনঃ রুপসা ট্রাফিক মোড় থেকে রূপসা সেতু (খানজাহান আলী সেতু) পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই জায়গায় ২ থেকে ৩ ফিট ভয়ানক খানাখন্দ, জায়গায় জায়গায় রাস্তার বিটুমিন উঠে গিয়ে চোরা গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আমাবস্যা ও পূর্ণিমা  সময় ভৈরব নদের জোয়ারের এবং ভারী বর্ষনের পানিতে এই রাস্তা হাটু পর্যন্ত ডুবে যায়। প্রতিনিয়ত মালামালসহ ভারী ট্রাক,যাত্রীসহ অটোরিক্সা ও বিভিন্ন প্রকারের যাববহন পানিতে ডোবা রাস্তায় গর্তে উল্টে পড়ে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটছে। সন্তান সম্ভাবনা গর্ভবতী মায়েরা, মেরুদন্ডের সমস্যা বা অন্যান্য জটিল রোগে ভূক্তভোগী মানুষ এই রাস্তায় চলাচলের সময় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।

স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিকগন ক্ষোপ প্রকাশ করে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি দাবী জানান যে, বড় ধরনের ঝুকি এড়ানোর জন্য যথাসম্ভব চলাচলের নুন্যতম উপযোগী রাস্তা মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যেগ গ্রহনের জন্য ।

সমন্বয়হীতার কারণে গতি অত্যন্ত মন্থর হওয়ায় ৮ বছরে পেরিয়ে গেলেও এর কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, ডিসিআর’র জমি (বন্দোবস্ত) ও অবৈধ দখলের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ কয়েক দফা বাধাগ্রস্ত হয়। জমি অধিগ্রহণে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের আপত্তি ও ক্ষতিপূরণ জটিলতায় দীর্ঘদিনেও সড়ক প্রশস্তকরণে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। যে কারণে গত ২১ জুলাই ২০২০ একনেকের সভায় তীব্র ক্ষোপ প্রকাশ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপরই নড়েচড়ে বসে খুলনার স্থানীয় প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিরা । প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের মধ্যে সমন্বয় তৈরির লক্ষ্যে খুলনার জেলা প্রশাসক গত বছরের (২০২০ইং) গত ১৮ আগস্ট খুলনা সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসন, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খুলনা (কেডিএ) এবং খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সভার আয়োজন করে। ওই সভায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার এবং সংশ্লিষ্ট তিন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।উক্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খুলনার উন্নয়ন এবং সাধারণ জনগণের স্বার্থে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) কাছে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ১.১৭৫০ একর জমি হস্তান্তর করবে, এই মর্মে গত ২০ আগস্ট ২০২০ইং জেলা প্রশাসন এবং খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি অধিগ্রহণ চুক্তি পত্রে স্বাক্ষরিত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক খুলনার জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ও খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে ৩১ আগস্ট ২০২০ইং সকাল ১১টায় শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ১.১৭৫০ একর জমির সীমানা চিহ্নিত করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুকূলে দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়। ফলে দীর্ঘদিনের  সমঝোতার অভাবে ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জটিলতা ছিল তা নিরসর করা হয় ।

এরপরও কেডিএ’র অধিগ্রহণকৃত জায়গার উপরের স্থাপনা নিলাম ক্রয়কারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ক্রয়কৃত স্থাপনা ভেঙ্গে আনতে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাড়ীর মালিকগনের সাথে সৃষ্টি হয় নতুন জটিলতা । ঠিকাদারদের দাবী তাদের নিলাম ক্রয়কৃত সম্পত্তি রাতের অন্ধকারে ব্যবসায়ীরা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে । ঠিকাদারগন বাধা দিলে আক্রমনের স্বীকার হচ্ছে। এবিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা ও কেডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, আমরা ঠিকাদারকে মালামাল বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে এব্যপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তারা জেলা প্রশাসন থেকে কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি, যে কারণে তাদের মালামাল নিজ হেফাজতে নিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, অনুমোদিত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রথমবার একবছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এর মধ্যেও কাজ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই দুইবছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বরা হয়। এরপর তৃতীয়বার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই একবছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে সাড়ে তিন বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন