১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,রাত ৯:০৩

শিরোনাম
খুলনার লবণচরায় পিওর আর্থ এর সীসা দূষণ সচেতনতা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগরীতে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ’র “ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়মুখীকরণ বিষয়ক সংলাপ” মোংলা বন্দরের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন খুলনায় ‘তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকা’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং সেক্টরে এস আলমের একচ্ছত্র নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠাসহ ৫ দফা দাবিতে খুলনায় সংবাদ সম্মেলন খুলনার তেরখাদায় নৌবাহিনীর অভিযানে অবৈধ কারেন্ট জাল ও চায়না দোয়ারী জাল আটক খুলনা মহানগরীর ১ ও ২৫নং ওয়ার্ডকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা খুলনায় ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর পূনঃ সবুজায়ন কার্যক্রম উদযাপন এবং সমন্বিত সবুজ বিদ্যালয় ঘোষণা অনুষ্ঠিত

খুলনার লবণচরায় পিওর আর্থ এর সীসা দূষণ সচেতনতা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

খুলনার লবনচরায় ‘শেয়ারিং লেড রেমেডিয়েশন আউটকামস: এঙ্গেজিং কমিউনিটিজ আ্যন্ড স্টেকহোল্ডারস ফর দ্যা লেড-ফ্রি ফিউচার’ শীর্ষক এক সচেতনতামূলক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসএসআর স্কুল খুলনা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় পিওর আর্থ (Pure Earth) বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ফরাসি সরকারের ফ্রেঞ্চ ফ্যাসিলিটি ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট (FFEM) এর অর্থায়নে ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর দ্যা রিডাকশন অব লেড কন্টামিনেশন ইন বাংলাদেশ, এফএফএম প্রজেক্ট’ এর অংশ হিসেবে এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি লবনচরা ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া এলাকায় সোসাইটি অফ সোশ্যাল রিফর্ম (এসএসআর) স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে দেড়টায় বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, পিওর আর্থ এর বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মিতালী দাশ, পিওর আর্থ এর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর ড. গর্ডন বিঙ্কহোরস্ট, এসএসআর স্কুল এর অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান, খুলনার পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট তানভীর হায়দার, (এমআইএস), পিএমআর, ডিজিএইচএস এর সহকারী প্রধান মো. জোবায়ের হোসেন, এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সাদিকুল ইসলাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা এবং এলাকাবাসি উপস্থিত ছিলেন।

সচেতনতা সভায় পিওর আর্থের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (বাংলাদেশ) আফতাব উজ জামান খান এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. আতিকুল ইসলাম সীসা পরিশোধন কর্মসূচির ফলাফল নিয়ে উপস্থাপনা করেন। অনুষ্ঠানে ভিডিও উপস্থাপনা, চিত্র প্রদর্শনী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরবন থিয়েটারের শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি পাপেট ও মাপেট শো প্রদর্শিত হয়।

বিশ্বব্যাপী সীসা দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, যেখানে আনুমানিক ৩৬ মিলিয়ন শিশু (৬০%) এর রক্তে সীসার মাত্রা ৫ মা.গ্রা/ডে.লি এর উপরে রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) নির্দেশিত রেফারেন্স সীমার ঊর্ধ্বে। ভোগ্যপণ্যে সীসার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং ব্যবহৃত সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারির অপরিকল্পিত ও অনিরাপদ রিসাইক্লিং সীসা দূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। পিওর আর্থের টক্সিক সাইট আইডেন্টিফিকেশন প্রোগ্রাম (টিএসআইপি) দেশব্যাপী প্রায় ৩০০টি বিষাক্ত স্থান সনাক্ত করেছে, যার অধিকাংশই সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারির অপরিকল্পিত রিসাইক্লিং সাথে সম্পর্কিত। সীসার সংস্পর্শ মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি, বুদ্ধিমত্তা হ্রাস, আচরণগত সমস্যার ঝুঁকি, কিডনি ও হৃদরোগ, গর্ভাবস্থার জটিলতা এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

খুলনার লবনচরার এসএসআর স্কুল এলাকাটি ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সক্রিয় থাকা একটি অবৈধ সীসা-অ্যাসিড ব্যাটারি গলানোর কার্যক্রমের কারণে মারাত্মকভাবে সীসা দূষণের স্বীকার হয়েছে। ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৪ সালে সংগৃহীত মাটি, জল এবং ধূলিকণার নমুনাগুলোতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিরাপদ সীমার চেয়ে অধিকতর সীসার ঘনত্ব পাওয়া গেছে, যা ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মচারী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। এর প্রতিকার হিসেবে পিওর আর্থ এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং কেসিসির সহায়তায়, এই বছরের মার্চ মাসে একটি ‘কম্প্রিহেন্সিভ লেড রেমেডিয়েশন (সীসা পরিশোধন) কর্মসূচি’ শুরু করে। সীসা দূষিত মাটি পরিশোধনের এই কার্যক্রমে ৯৩৩ ঘনমিটার দূষিত মাটি, ১২০ ঘনমিটার কংক্রিট ও ইটের ধ্বংসাবশেষ, ২১ ঘনমিটার উদ্ভিজ্জ বর্জ্য এবং ১৩ ব্যাগ সেপারেটরসহ ৮৮টি ভাঙা সীসা-ব্যাটারির আবরণ ছিল। পরিশোধিত সব এলাকায় দূষিত মাটি পরিবর্তন করে পরিষ্কার মাটি বা বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।

রেমেডিয়েশন কর্মসূচির আগে শিক্ষার্থী (৫-১৩ বছর বয়সী), শিক্ষক, কর্মচারী এবং এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে রক্তে সীসার মাত্রা পরীক্ষার (ব্লাড লেড লেভেল-বিএলএল) উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরিচ্ছন্নতার এক বছর পর পিওর আর্থের অংশীদারিত্বে বিএসএমএমইউ-এর মাধ্যমে ফলো-আপ বিএলএল পরীক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

লবনচরা এলাকার বাসিন্দা, স্থানীয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি খুলনাবাসীর জন্য সীসামুক্ত ভবিষ্যৎ নির্মাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন