২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,দুপুর ২:৩৩

‘কোরবানির মাংস তিন ভাগ করা অপরিহার্য নয়, তবে এভাবে করাটা সৌন্দর্যের অংশ

প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২১

  • শেয়ার করুন

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা অপরিহার্য নয়, তবে এভাবে করাটা উত্তম— এমনটাই জানিয়েছেন আলেমরা। অভিজ্ঞ আলেমরা বলছেন, হযরত মুহাম্মদ (স.) কে অনুসরণ করে কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া সৌন্দর্যের অংশ। এক্ষেত্রে কেউ চাইলে তিন ভাগ নাও করতে পারেন। তাতে ধর্মীয় দৃষ্টিতে কোনও বাধা নেই।
ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মাসিক গবেষণাপত্র আল কাউসারে এ বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া লিখেছেন, ‘মাসআলা: ৪৩. কোরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো মাংস যদি নিজে রেখে দেয়, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪,আলমগীরী ৫/৩০০’

এ বিষয়ে মাওলানা জুনায়েদ আহমাদ ছিদ্দিক বলেন, ‘কোরবানির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) কোরবানিরর মাংস তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে রাখতেন, একভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের দিতেন এবং আরেক ভাগ দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। ফলে এটি একটি তাকওয়া (রক্ষা করে চলা)। তবে কেউ চাইলে নিজে সব মাংস খেতে পারবেন। আবার চাইলে বেশি অংশ দানও করতে পারবেন।’

রাজধানীর আজিমপুর ফয়জুল উলুম মাদ্রাসার হাদিস বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মুফতি লুৎফুর রহমান বলেন, ‘কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করতেই হবে—এমন কোনও শর্ত নেই। যার ইচ্ছা করবেন, ইচ্ছা না করলে সমস্যা নেই। তবে বণ্টন করা রাসুল (স.) এর সুন্নত।’

আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে কুরবানির গোশত কয় ভাগ করতে হবে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কুরআনুল কারিমের দিকনির্দেশনা এমন-
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذَلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘আর কাবার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের জবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু চায় না তাকে এবং যে চায় তাকেও। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৬)

কুরআনুল কারিমের উল্লেখিত আয়াতে কারিমা থেকে কুরবানির গোশতকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করার একটি নির্দেশনা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাহলো-
১. কুরবানি দাতা নিজেদের জন্য রাখবে তথা আহার করবে।
২. আত্মীয়-স্বজনদের এক ভাগ দেবে। যারা চায় না।
৩. যারা অভাবি বা গরিব; তাদের এক ভাগ দেবে।

অধিকাংশ ইসলামিক স্কলাররাই কুরবানির পশুর গোশতকে উল্লেখিত তিন ভাগে ভাগ করাকে মুস্তাহাব এবং উত্তম বলেছেন।

কুরবানি হবে না; এমনটি ভাবার কারণ নেই…
তবে হ্যাঁ, কেউ যদি তিন ভাগ করার ক্ষেত্রে কম-বেশি করে তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কুরবানি হবে না বা কুরবানি নষ্ট হয়ে গেছে, এমনটি ভাবার কিংবা চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা কুরবানি দাতার জন্য কুরবানির পশুর গোশত একেবারে পাল্লায় মেপে তিন ভাগে ভাগ করা আবশ্যক কোনো বিষয় নয়।

বরং কুরবানির পশুর এ গোশত ভাগ না করে এমনিতেই প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং গরিব-অসহায়কে দেয়া যাবে। এ জন্য ভাগ করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

সুতরাং কুরবানিদাতা ব্যক্তি ইচ্ছা করলে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করে তা হাদিয়া বা দান করার পাশাপাশি নিজেরাও আহার করতে পারেন। তাতে মুস্তাহাবের ওপর আমল হয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

আবার চাইলে নিজের ইচ্ছা মতো ভাগ না করেও হাদিয়া দিতে পারেন বা দান করতে পারেন। তাতে কোনো সমস্যা নেই।

প্রচলিত সমাজের ভাগ
দেশের অধিকাংশ এলাকায় একটা রেওয়াজ প্রচলিত আছে যে, সমাজের ভাগ। সেখানে পুরো গ্রাম বা এলাকা থেকে সমাজের ভাগ নাম দিয়ে বিভিন্ন কুরবানির পশুর গোশত এক স্থানে জমা করা হয়। পরে তা গরিব-দুঃখীর মাঝেসহ সবার ঘরে ঘরে বণ্টন করা হয়।

এভাগে গোশত উঠিয়ে তা অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। তবে জোরপূর্বক না নিয়ে বরং সেচ্ছায় খুশি মনে সামাজিকভাবে এভোবে গোশত সংগ্রহ করে গরিব এবং অভাবি মানুষের কাছে গোশত পৌঁছে দেওয়াও মন্দ নয়।

তবে এর একটা কুপ্রভাবও আছে-
যিনি কুরবানি করেছেন, তিনি হয়তো তার পরিচিত কোনো গরিব বা একান্ত কাউকে দেবেন। আবার হয়তো এখন কোনো গরিব বা অন্য কাউকে দেবেন না ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখবেন। পরে গরিব-অসহায়দের দেবেন বা খাওয়াবেন।

আবার হয়তো তিন ভাগের একভাগ হয়তো পুরোপুরি গরিবকে দেবেন না কিছু কম বেশি দেবেন। ইসলাম এ স্বাধীনতা প্রত্যেক কুরবানিদাতাকেই দিয়েছেন। সমাজের লোক যদি একভাগ গোশত নিয়ে যায়। তাতে তখন আর করার কিছু থাকে না।

অনেক সময় লজ্জায় পড়ে হলেও এক্ষেত্রে কিছু বলা যায় না। এ বিষয়টি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অবৈধ বা গোনাহের পর্যায়ে চলে যায়। কারণ মনে সন্তুষ্টিতে না দিয়ে সমাজের চাপের কারণে দিলে তা কোনো অবস্থাতেই বৈধ বা জায়েজ থাকে না।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী যার যার ভাগের কুরবানির পশুর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেভাবে দিকনির্দেশনা ও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের উপদেশ অনুযায়ী কুরবানির গোশত ভাগ ও আহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন