প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২০
টেস্ট না করেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে ঢাকার উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়।
বেলা চারটার দিকে রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে র্যাবের টীম সেখানেও অনুমোদনহীন টেস্ট কিট ও বেশ কিছু ভূয়া রিপোর্ট পেয়েছে জানিয়েছে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
অভিযান শেষে মিস্টার আলম বলেনম “রিজেন্ট হাসপাতাল ও প্রধান কার্যালয় সিলগালা করে দিয়েছি। হেড অফিসে বসেই মিথ্যা রিপোর্ট তারা তৈরি করতো। হেড অফিসে ৫/৭ দিনের স্যাম্পল এক সাথে করে ফেলে দিতো। ভূয়া রিপোর্টও পেয়েছি। অনুমোদনহীন র্যাপিড কিট আমরা পেয়েছি”।
অভিযান শুরুর আগেই মিস্টার আলম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তিনি জানান রিজেন্ট হাসপাতাল ও গ্রুপের মালিক ও এমডি সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং এর মধ্যে আট জনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার বিকেলে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর মিস্টার আলম বলেছিলেন, “এসব অনিয়মের সাথে হাসপাতালটির চেয়ারম্যানই জড়িত এবং তিনি নিজেই এসব ডিল করেছেন। ”
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে এটি দ্বিতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান যার বিরুদ্ধে মামলা হলো।
এর আগে জেকেজি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার প্রমাণ পেয়ে সেটি বন্ধ করে দিয়েছিলো। আটকও করা হয়েছিলো কয়েকজনকে।
তবে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিককে আটক না করা গেলেও সোমবারই হাসপাতালটির আটজন কর্মকর্তাকে আটক করেছে র্যাব।
৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদন দিয়েছিলো ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে।
পরে ২০১৭ সালে মিরপুরেও হাসপাতালটির আরেকটি শাখা খুলে তার অনুমোদন নেয়া হয়।
যদিও এসব হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ একবার উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর নবায়ন করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর যখন কোনো হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে রাজী হচ্ছিলোনা তেমন প্রেক্ষিতে রিজেন্ট সহ তিনটি হাসপাতালের সাথে চুক্তি করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
চুক্তির আওতায় সরকার সেখানে ডাক্তার, নার্সসহ কিছু জনবলও নিয়োগ দেয়। হাসপাতালটির করোনা রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার কথা ও পরে সরকার সেই টাকা পরিশোধ করার কথা ছিলো।
রিজেন্টের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়ার পর সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪২৬৪টি স্যাম্পল রিজেন্ট টেস্ট করেছে এবং এর বাইরে ৬ হাজারের বেশি স্যাম্পল টেস্ট না করেই তারা ভূয়া রিপোর্ট দিয়েছে।
“একই সাথে এ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ২০১৪ সাল থেকে নেই আর আইসিইউ যেটা আছে এটা নরমাল ওয়ার্ডও না। সেখানে পুরনো কাথা বালিশ থেকে আরম্ভ করে সব আছে। এর যে ডায়াগনসিস ল্যাব সেখানে কোনো মেশিন নেই, সেখানে কোনো টেস্ট না করেই রিপোর্ট দিয়েছে। ফ্রিজের মধ্যে এক অংশে রি এজেন্ট আর অন্য অংশে আইয়ের মাছ পাওয়া গেছে। এর যে ডিসপেনসারি সেখানে সব সার্জিক্যাল আইটেম ৫/৬ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মালিকের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নেই”।
এর আগে প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানোর সময় তিনি বেশ কিছু রিপোর্ট ও কিট সাংবাদিকদের দেখিয়ে বলেন, “দেখুন এগুলো তো হাসপাতালে থাকার কথা। অথচ এসব রিপোর্ট পড়ে আছে তাদের গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে”।
“এসব অনিয়মের সাথে হাসপাতালটির চেয়ারম্যানই জড়িত এবং তিনি নিজেই এসব ডিল করেছেন,” বলেছেন মিস্টার আলম।
হাসপাতালটিতে আজ দুপুর নাগাদ ১৪ জন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসাধীন ছিলো।
এর আগে সোমবার বিকেলে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর সারোয়ার আলম জানিয়েছিলেন যেএখন পর্যন্ত দুশোর মতো রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল।
ভুয়া রিপোর্ট তৈরি আর দুবার টাকা আদায়
সোমবার বিকেলে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর মিস্টার আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে তারা হাসপাতালটি একজন কর্মকর্তার রুমে অনেক নমুনা পড়ে থাকতে দেখেছেন যেগুলো করোনা পরীক্ষার জন্য গ্রহণ করা হয়েছিলো।
তবে অভিযানের আগেই করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট তৈরির অন্তত ১৪টি প্রমাণ র্যাব পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মিস্টার আলম জানান হাসপাতালটি নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোর কোনো পরীক্ষা ছাড়াই পজিটিভ বা নেগেটিভ উল্লেখ করে রিপোর্ট দিতো।
“আমরা আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভেরিফাই করে দেখেছি যে তারা এসব রিপোর্ট ওখান থেকে নেয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চিত করেছে যে এসব নমুনা তারা পরীক্ষা করেনি এবং এসব রিপোর্টও তারা দেয়নি”।
বরং এসব রিপোর্ট বিশ্বাসযোগ্য করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সিল ও প্যাড নকল করে ব্যবহার করা হতো বলে বলছেন মিস্টার আলম।
এ ধরণের প্রচুর ভুয়া সনদ অভিযানের সময় উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আবার সরকারিভাবে যে টেস্ট বিনামূল্যে করার কথা সেগুলোর জন্যও তারা টাকা আদায় করতো।
আবার রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করে পরে সেটিকে বিনামূল্যে করা হয়েছে দেখিয়ে সরকারের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকার বিল জমা দিয়েছিলো রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ।
এমনকি যেই চিকিৎসা বিনামূল্যে করার কথা সেটির জন্য রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার সরকারের কাছ থেকেও সেই টাকা গ্রহণ করেছে হাসপাতালটি।
যদিও অভিযানের আগে রিজেন্টের মালিকা মোহাম্মদ সাহেদ সাংবাদিকদের কাছে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ গুলো অস্বীকার করেছেন।
তবে এর পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা।