প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫
আবুল হাসান, মোংলা : মোংলা শহরের চাঞ্চল্যকর নীলা হোসেন ওরফে পাথর (১৪) আত্মহনন ঘটনার ভিন্ন মোড় নিতে শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে পরিবারের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রচার পেলেও এখন জানা যাচ্ছে, বখাটে এক যুবক ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই কিশোরীর সাথে বিশেষ সখ্যতা তৈরী করে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন স্পষ্টে নিয়ে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণসহ ভিডিও করে রাখে।
পরে ওই ভিডিও’র ভয় দেখিয়ে কিশোরীটিকে ব্লাকমেইল করে হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এতে কিশোরীটি মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার লজ্জা ও বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পেতে এক পর্যায়ে আত্মহননে বাধ্য হয়।
এ ঘটনার প্রায় চার মাস পর মৃতের পিতা আলী হোসেন বাচ্চু এক নারীসহ তিন জনকে অভিযুক্ত করে বাগেরহাট আদালতে গত ৭ এপ্রিল ধর্ষণ ও আত্মহননে প্ররোচনার দায়ে এজাহার দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ২১ এপ্রিল মোংলা থানা পুলিশ এজাহারটিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণসহ আত্মহত্যার প্ররোচিত সংক্রান্ত ধারায় মামলা রেকর্ড করেন।
এদিকে পুলিশ এ মামলার প্রধান আসামি মোঃ আসহাবুল ইয়ামিন (২৪) কে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধবী কলনী এলাকা থেকে গত ২২ এপ্রিল গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত যুবকের পিতা মোঃ সোহেল রানা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি নৌযানে মাষ্টার পদে কর্মরত রয়েছেন।
মামলা ও মৃতের পারিবারিক সূত্র জানায়, মোংলা শহরের সামসুর রহমান রোড়ের বাসিন্দা আলী হোসেন বাচ্চুর মেঝ মেয়ে ও স্থানীয় মোংলা ইসলামী আদর্শ একাডেমির ৮ম শ্রেণির ছাত্রী নীলা হোসেন ওরফে পাথর (১৪) পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায় বেশ পারদর্শী ছিল। অত্যন্ত চটপটে এই নীলার ক্রিকেট খেলার সুবাদে মোংলার বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত ছিল। বিভিন্ন জায়গায় খেলার সূত্র ধরে স্থানীয় স্থায়ী বন্দরের মাধবী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি নৌযানের মাষ্টার সোহেল রানার বখাটে ছেলে মোঃ আসহাবুল ইয়ামিন ও তার কয়েক সহযোগীর সাথে নীলার পরিচয়ের এক পর্যায়ে বিশেষ সখ্যতা গড়ে ওঠে। আর এই সখ্যতাই কাল হলো নীলার জীবনে।
গড়ে ওঠা সখ্যতার কিছুদিন পর আসহাবুল ও তার সহযোগীরা নীলাকে ফুঁসলিয়ে ট্রলারে করে সুন্দরবনের করমজল পিকনিক স্পষ্টে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে নীলাকে নেশা জাতীয় কিছু খাইয়ে আসহাবুল ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে সে দৃশ্য ও নীলার নগ্ন ছবি ভিডিও করে রাখে আসহাবুল ও তার সহযোগীরা। এরপরই শুরু হয় নীলার উপর আসহাবুল ও তার সহযোগীদের নানা মানুষিক ও শারীরিক অত্যাচার। ধর্ষণের ভিডিও ফেস বুক ও অভিভাবকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে করতে থাকে ধারাবাহিক ব্লাক মেইল।
নীলাকে এভাবে ব্লাক মেইল করে বেশ কয়েকবার আসহাবুল তার সহযোগীদের সহযোগীতায় বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণসহ নানা অত্যাচার করে। এভাবে দিনকে দিন অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে গত ১৪ ডিসেম্বর গেলে নীলাকে একযোগীর মোটর সাইকেলে করে আসহাবুল কাইনমারী এলাকায় একটি কপিশপে ডেকে নেয়। সেখানে কথাবার্তার এক পর্যায়ে নীলা বিয়ের প্রস্তাব দিলে আসহাবুল তিরস্কার লজ্জাজনক ও অপমানমুলক নানা কথাবার্তা বলাসহ তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। এতে নীলা মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে পরের দিন রাতে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
এদিকে এ ঘটনায় প্রথমে মোংলা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়। পরে মৃতের অভিভাবকরা বিভিন্ন মাধ্যমে এসব ঘটনা জানতে পেরে আসহাবুলসহ তার কয়েক সহযোগীর বিরুদ্ধে বাগেরহাট আদালতে গত ৭ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণসহ আত্মহত্যার প্ররোচিত সংক্রান্ত ধারায় এজাহার দাখিল করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোংলা থানার ওসি (তদন্ত) মানিক চন্দ্র গাইন জানান, ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। ঘটনার অন্যতম হোতা আসহাবুল ইয়ামীনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আসহাবুল পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা ও তার নিজের সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করেছে। মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারে জোর পুলিশী তৎপরতা চলছে বলেও জানান তিনি।