১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার,রাত ৪:১৩

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২২

  • শেয়ার করুন

আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর পূর্বে আইয়্যামে জাহেলিয়তের ঘনঘোর তমসা ছাওয়া ৫৭০ খৃস্টাব্দের সুবহে সাদেকের সময় জাজিরাতুল আরবের মক্কা নগরীর সম্ভাস্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে ’ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়…। রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে ৬৩ বছর বয়সে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ১১ হিজরির ঠিক এ দিনেই তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।

জন্মের পূর্বেই পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ-কষ্ট আর অসীম প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে ওঠেন ।
সমগ্র আরব জাহান যখন পৌত্তলিকতা ও অনাচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, সেই আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে মহান আল্লাহ সত্য, ন্যায়, কল্যাণ ও একত্ববাদের প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রিয় হাবিবকে অপার রহমত হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। এ কারণে রাসুল (সা.)-কে সম্মান জানিয়ে রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবেও সম্বোধন করেছেন মহান আল্লাহ। বিনয়, সহিষ্ণুতা, দয়া, সহমর্মিতাসহ সব মানবিক সদ্‌গুণের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হিসেবে তিনি ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়নির্বিশেষে সর্বকালে সর্বজনস্বীকৃত।

ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যবাদিতার জন্য শৈশবেই তিনি ‘আল আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সব নবী ও রাসুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মহানবী (সা.)–এর ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত প্রকাশিত হয়। এরপর ২৩ বছর তিনি তৌহিদের বাণী প্রচার করেছেন। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে এবং সমাজে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন।
চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন।’তৌহিদেররই মুর্শিদ’ অসভ্য বর্বর ও পথহারা মানব জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য-বর্বর আরব জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামের উপর নিপীড়ন শুরু করে। বহুমাত্রিক শয়তানী চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। মহান আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তাঁর সাথী হতে থাকে। অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি একপর্যায়ে তারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লামকে হত্যার নীলনকশা প্রনয়ন করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান হিসাবে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদী, খৃস্টান, মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় সমান্তরালে। ২৩ বছর অক্লান্ত শ্রম অসীম সাধনায় অবশেষে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কামিয়াবী অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে ’আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা হিসাবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতিহাসের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও তাঁকে মানবজাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনটিতে নফল রোজা রাখেন। বেশি বেশি দরুদ পাঠ, কোরআন শরিফ তিলাওয়াত, দান-খয়রাতসহ নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করেন। এ ছাড়া মিলাদ এবং রাসুল (সা.)-এর জীবনী নিয়েও আলোচনার আয়োজন থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্‌যাপনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) বা আনন্দঘন রাসুলের জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাতের উপর আলোচনা,সিম্পোজিয়াম,সেমিনার ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন র‌্যালী বের করবে।দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। সরকারী ছুটির দিন।জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্রসমূহে ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা মুসলমান ভাই-বোনদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। এর আগে তিনি বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্ত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার উদ্বোধন করেন।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন