প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২০
অবশেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন খুলনার নিরপরাধ সালাম ঢালী। সোমবার (০৬ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
এর আগে বিকেলে বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তন্ময় গাইন আসামির নাম, বাবার নামের এবং ঠিকানার একাংশের মিল থাকায় বিনা অপরাধে জেলে থাকা সালাম ঢালীকে মুক্তির আদেশ দেন।
খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জিত কুমার মণ্ডলকে নিয়মিত আদালত চালু হওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে কেন সালাম ঢালীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বাগেরহাট কারাগারের জেলার এস এম মহিউদ্দিন হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশনা (বেলবন্ড) পালন করেছি।
আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোংলা থানার মামলা নং ০২, তারিখ ০৩/০৯/২০০৫। ধারা ৩৭৯/৪১১ পেনাল কোড । জিআর ১৪৫/২০০৫ (মোংলা) নং মামলায় ধৃত. মো. আব্দুস সালাম, পিতা- মফিজ উদ্দিন, সাং- শেখ পাড়া মেইন রোড, থানা- সোনাডাঙ্গা ও জেলা- খুলনা (চালান মোতাবেক অন্তর্তীকালীন হাজতী পরোয়ানায় উল্লেখিত) এর রিলিজ অর্ডার ।
php glass
সূত্রে বর্ণিত মামলায় ধৃত মো. সালাম ঢালী, পিতা- মৃত মফিজ উদ্দিন ঢালী, সাং- শেখ পাড়া মেইন রোড, খানা- সোনাডাঙ্গা ও জেলা- খুলনা অত্র মামলার আসামি না হওয়ায় উক্ত ব্যক্তি অন্য কোনো মামলায় জড়িত না থাকলে সত্তর অবমুক্ত করা হোক।
বাগেরহাটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ভার্চুয়াল কোর্ট নং ০৩ বাগেরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপারকে এ নির্দেশনা দেন।
বাগেরহাট কোর্ট পরিদর্শক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সালাম ঢালীকে আদালত মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এসআই সঞ্জিত কুমার মণ্ডলকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহকারী পরিচালক (খুলনা জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বে) জেসমিন সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে সালাম ঢালীর নিউজটি বাংলানিউজে ‘আসামি না হয়েও জেল খাটছেন খুলনার সালাম ঢালী’ এ শিরোনামে প্রচারিত হয়। যা আমাদের দৃষ্টি গোচর হয়। বাগেরহাটের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এর পরিপ্রেক্ষিতে তার মুক্তির জন্য আবেদন করেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সালাম ঢালীকে মুক্তির আদেশ দেন।
এর আগে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক এক আসামির সঙ্গে নামের কিছুটা মিল থাকায় খুলনার সালাম ঢালীর কারাগারে থাকার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
রোববার (৫ জুলাই) মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং সালাম ঢালী এ রিট করেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির সালাম ঢালীর দ্রুত মুক্তি চেয়ে পৃথক একটি রিট করেছেন।
গত ১ জুলাই ‘আসামি না হয়েও জেল খাটছেন খুলনার সালাম ঢালী’ শীর্ষক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করে।
সালাম ঢালীর স্ত্রী শারমিন বলেন, বাংলানিউজের ওপর আমরা ভীষণ খুশি। বাংলানিউজের সংবাদ প্রচারের কারণে আমার স্বামীর মুক্তি মিলেছে। আমাদের মতো অসহায় মানুষের কথা তুলে ধরার জন্য বাংলানিউজসহ যারা আইনি সহযোগীতা করেছেন তাদের কাছে আমরা ঋণী।
খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদালত প্রতিয়মান হয় যে, এ সালাম ঢালীর সঙ্গে মামলার কোনো সংশ্লিষ্ঠতা নেই। এ কারণে মামলা থেকে তাকে রিলিজ করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন খুলনার আবেদনে ন্যায় বিচার পেলেন সালাম ঢালী।
উল্লেখ্য, আসামির নাম, বাবার নামের এবং ঠিকানার একাংশ মিল থাকায় নিরপরাধ মো. সালাম ঢালী (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার প্রকৃত আসামির নাম মো. আব্দুস সালাম। মূল আসামিকে বাঁচাতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অনুসন্ধানীতে জানা যায়, চলতি বছরের ১১মার্চ রাত ১২টায় খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জিত কুমার মণ্ডল সদর থানা এলাকার ৬০/১৮, শের-এ-বাংলা রোডের বাসিন্দা সালাম ঢালীকে গ্রেফতার করেন। মো. সালাম ঢালীর পিতার নাম মফিজ উদ্দিন ঢালী। প্রায় চার মাস ধরে নিরপরাধ মুদি দোকানি সালাম ঢালী বাগেরহাটের কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।
অন্যদিকে প্রকৃত অপরাধী মো. আব্দুস সালাম খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধীন শেখপাড়া মেইন রোডের মৃত শফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি এখন পলাতক রয়েছেন।
মূলত নিজের নাম, বাবার নাম ও ঠিকানায় একাংশ মিল থাকার সুযোগ নিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তবে মামলার বিবরণে উল্লেখিত প্রকৃত আসামির নাম, পিতার নাম বা ঠিকানা কোনোটাতেই পুরোপুরি মিল নেই।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কোস্টগার্ডের একটি টহল দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত ৩টার দিকে মোংলা থানাধীন ফেরিঘাট সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে একটি মিনি ট্রাক (চ-মেট্রো ড-১১-০২০৭) তল্লাশি চালিয়ে কিছু ইলেকট্রনিক্স মালামাল জব্দ করে। যা মোংলা বন্দরে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে অবৈধভাবে সংগ্রহ করে ট্রাকযোগে খুলনায় পাচার করা হচ্ছিলো। ট্রাকসহ মোট পণ্যের মূল্য ৮ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা। এ সময় মো. আব্দুস সালামসহ তিন জনকে আটক করে মোংলা থানায় হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে তারা জামিনে বের হন। মোংলা থানার মামলা নং- ২ (০৩/০৯/২০০৫)। যার জি আর নং-১৪৫/০৫।
২০০৯ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ারব হোসেনের আদালতে মো. আব্দুস সালাম দোষী প্রমাণিত হন। এতে বিচারক তাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে আব্দুস সালাম পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১১ মার্চ গভীর রাতে এ অপরাধের মূল আসামিকে বাদ দিয়ে নিরপরাধ সালাম ঢালীকে গ্রেফতার করে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ।