মোহাঃ ফরহাদ হোসেন, কয়রা : প্রতিবছরের মতো এবারও মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে যাচ্ছেন মৌয়ালরা। আজ পহেলা এপ্রিল সোমবার বিকাল ৩ টার দিকে কাশিয়াবাদ ষ্টেশন থেকে সঠিক ভাবে মধু সংগ্রহের দিক নির্দেশনা শেষে কয়রার মৌয়ালেরা সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন।
যানা গেছে, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কাশিয়াবাদ ফরেষ্ট ষ্টেশন থেকে এ বছর মধু আহরণের জন্য অনুমতিপত্র ৬১ টি নৌকার (পাস) দেওয়া হয়। পাস নিয়ে মৌয়ালরা চলে যাবেন সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে মধু সংগ্রহ করতে।
কয়রা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন মঠবাড়ি, ৪নং কয়রা, ৫নং কয়রা, ৬নং কয়রা, গড়িয়াবাড়ি, পাথরখালী, কাটকাটা, হরিহরপুর, গোলখালী, আংটিহারা, ঘড়িলাল,এলাকার মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়রা উপজেলা থেকে এবার ৪-৫ হাজার পেশাদার মৌয়াল যাবেন মধু সংগ্রহ করতে। তবে মৌসুম শুরুর আগেই চোর চক্র ‘মধুমহলে’ হানা দেওয়ায় মধু কম পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
মৌয়ালরা জানান, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ও গড়ান ফুলে মধু আসে। এরপর আসে আসে কেওড়া ও বাইন, গেওয়া ফুলের মধু। এই চার প্রজাতির মধুর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ও দামি হচ্ছে খলিশার মধু।
মৌয়াল আঃ সালাম বলেন , বর্তমানে সুন্দরবনে বনদস্যু না থাকায় নির্বিঘ্নে মধু আহরণ করা যাবে। তবে এবার সুন্দরবন থেকে মাছ ও কাঁকড়া শিকারের আড়ালে আগাম মধু কেটেছে চোর চক্র। তাই মধু কেমন হবে, তা বলা যাচ্ছে না।’ শঙ্কা থাকলেও প্রতিবারের মতো এবারও তিনি দল নিয়ে মধু সংগ্রহে যাবেন বলে জানান।
৫নং কয়রা গ্রামের মৌয়াল বিল্লাল শেখ বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর মধু আহরণের জন্য অনুমতি পেয়েছি। দুটি নৌকায় ১২ জনের বহর নিয়ে ১৫ দিনের জন্য বাজার সদয় নিয়ে রওনা হচ্ছি। গতবছর একজন সহযোগী এক থেকে দেড় মন মধু পেয়েছিল।
মাছ, কাঁকড়া আহরণের আড়ালে আগাম মধু কাটায় আমরা শঙ্কিত।
৬নং কয়রা গ্রামের মৌয়াল আমিরুল ইসলাম যানান, এলাকয় তেমন কোন কাজকর্ম না থাকায় মহাজনদের কাছ থেকে ধার দেনা করে মধু কাটতে যাচ্ছি। মধু না পেলে চালানে মার খাবো ঋনের বোঝা নিয়ে টানতে হবে।
এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে নির্বিঘ্নে মধু আহরণের জন্য বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া এবার বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য মৌয়ালদের সাবধানে চলাফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কোনো অবস্থাতেই মৌচাকের সম্পূর্ণ অংশ সংগ্রহ করা যাবে না। এসব নির্দেশনা অমান্য করলে তাৎক্ষণিক তার অনুমতি বাতিল করা হবে।এ বছর সুন্দরবনে তিন হাজার কুইন্টাল বা তিন লাখ কেজি মধু ও ৮০০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা রেঞ্জের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৫০ কুইন্টাল মধু ও ২০০ কুইন্টাল মোম।প্রতি কুইন্টাল মধুর জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা ও মোমের জন্য ২ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব দিতে হবে মৌয়ালদের।