২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার,রাত ১০:৫৮

ভোমরা বন্দরে আটককৃত ফলের ট্রাক বেমালুম গায়েব চেষ্টা ঠেকালো জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১

  • শেয়ার করুন

এম জিয়াউল ইসলাম জিয়া, ভোমরা(সাতক্ষীরা): দেশের শীর্ষ দূর্নীতিবাজ প্রভাবশালী ২৫ টি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের নিকট বকেয়া পাওনা আমদানী শুল্ক ১০ কোটি টাকা পরিশোধে দীর্ঘদিন বিলম্ব হওয়ায় বেনাপোল কাষ্টম হাউজ কমিশনারের অনলাইন সার্ভেয়ারে বিন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) লক ঘোষনার পর ভোমরা বন্দরে মেসার্স আরকেপি এন্টারপ্রাইজ, এ্যানি এন্টারপ্রাইজ এবং ফ্রেশ ফুডস ইমপেক্স বাংলাদেশ নামক আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের ভারত থেকে আমদানীকৃত ৮ গাড়ি (পঁচনশীল) ফল আটক করে ভোমরা কাষ্টমস। দেশের এই শীর্ষ তিনটি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান ভোমরা বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স শাহনাজ এন্টারপ্রাইজ, সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স কাজী এন্টারপ্রাইজ, সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স আলেয়া এন্টারপ্রাইজ, সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স আল মদিনা এন্টারপ্রাইজ এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স রোহিত ট্রেডার্স এর মাধ্যমে ভারত থেকে ৮ গাড়ি খেজুর, আনার ও টমেটো আমদানী করে। সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা আমদানীকৃত পণ্য দ্রæত ছাড় করার লক্ষ্যে কাষ্টম অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়। কিন্তু এই শীর্ষ তিনটি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান বেনাপোল কাষ্টম হাউজে শুল্ক পরিশোধ না করার শর্তে বিন-লকে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম থাকায় কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য ছাড়পত্র না দিয়ে আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পার্কিং ইয়ার্ডের অভ্যন্তরে আটক রাখে। এই তিনটি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান তাদের বকেয়া শুল্ক পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত দেশের কোনো বন্দর দিয়ে তাদের আমদানী বাণিজ্য কার্যক্রম চালাতে পারবে না বলে সহকারী কমিশনার আমীর মাহমুদ জানান। এদিকে ওই তিনটি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের ফলবোঝাই ভারতীয় ৮টি ট্রাক গত ২৮ জুলাই ২০২১ থেকে ২ আগষ্ট ২০২১ তারিখে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পার্কিং ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। তিনটি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের বকেয়া শুল্ক করাদি পরিশোধ করে তাদের আমদানীকৃত পণ্য ছাড়ের সুযোগ দেয় কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান তাদের বকেয়া শুল্ক পরিশোধ (বিন-আনলক) করতে ব্যর্থ হওয়ায় পণ্যবোঝাই ভারতীয় ট্রাকগুলো স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডে আটক থাকে। তবে স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডে আটক হওয়া ৮টি ফলবোঝাই ভারতীয় ট্রাকগুলো নিরাপদ অবস্থান থাকার ব্যাপারে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (এডি) মাহমুদুল হাসানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোমরা কাষ্টম থেকে আমাদেরকে কোনকিছু জানানো হয়নি। ভোমরা কাষ্টমস ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার সুযোগ নিয়ে বরখাস্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স আলেয়া এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শীর্ষ দূর্ণীতিবাজ সুজনের নেতৃত্বে অন্যান্য সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা কাষ্টমসকে অবহিত না করে রাতারাতি ভারতীয় ট্রাকগুলো থেকে বাংলাদেশী ট্রাকে পণ্য লোড দিয়ে গায়েব করার চেষ্টা চালায়।স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে দিয়ে ফলবোঝাই বাংলাদেশী তিনটি ট্রাক বেমালুম গায়েবের উদ্দেশ্যে আউটগোয়িং মনিটরিং কক্ষের ৩ নং গেট সংলগ্ন স্থানে নিয়ে আসে সিএন্ডএফ এজেন্টরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৪ আগস্ট ২০২১ বুধবার সকালে ভোমরা অফিসের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার ফিল্ড অফিসার হাবিবুর রহমান তালুকদার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যেয়ে কুখ্যাত চোরাচালানী খালিদ হাসান শান্তর পরিচালনায় সদ্য বরখাস্ত মেসার্স আলেয়া এন্টারপ্রাইজের খেজুরভর্তি দুটি ট্রাক ও আনারভর্তি একটি ট্রাক দেখতে পায়। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ভোমরা কাষ্টমস সহকারী কমিশনার আমীর মাহমুদ এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মনিরুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করলে তাদের টনক নড়ে। এক পর্যায়ে তারা বলেন, এ বিষয়ে তাদের কোনকিছু জানা নেই। এদিকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে চতুর্বাজ সিএন্ডএফ এজেন্টরা কাষ্টমস ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশী ট্রাকে লোডকৃত ফল টমেটো ও আনার সরকারী গোডাউনে আনলোড করে। এদিকে আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের বকেয়া শুল্ক পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার কারনে শ্রাবণের ভ্যাপসা গরম ও প্রবল বৃষ্টির কারনে পঁচে নষ্ট হচ্ছে আমদানীকৃত টমেটোসহ অন্যান্য ফল। আমদানীকৃত পণ্যের শুল্কায়ন হিসাবে সরকার হারিয়েছে সম্ভাব্য ৫৪ লক্ষ টাকার রাজস্ব। এছাড়া বিন-লকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান। একই সাথে ভোমরা কাষ্টমস আইন অনুযায়ী সময় মতো আমদানীকৃত পঁচনশীল পণ্য দ্রæত নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করা দরকার বলে বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করেন।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন