প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১
এম জিয়াউল ইসলাম জিয়া, ভোমরা(সাতক্ষীরা): আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর সড়ক পথ একটি জনগুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।দেশী-বিদেশী যাত্রী ও পর্যটকদের যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থা ভোমরা বন্দর সড়ক।দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থল বন্দর সড়কটি এখন যানজট আক্রান্তে অপ্রতিরোধ্য। সম্প্রতি অন্তহীন যানজট সমস্যা সমাধান এবং যানজটমুক্ত নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থায় সুষ্ঠু জীবনযাত্রা নির্বাহ এবং বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় নেই কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। পুলিশ প্রশাসনের চরম অবহেলায় ট্রাফিক ও নিরাপত্তা আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে ভোমরা বন্দর সড়কে ভয়াবহরুপে বৃদ্ধি পেয়েছে সীমাহীন যানজট। স্থল সীমান্ত জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে গাংনিয়া ব্রিজ পর্যন্ত দীর্ঘ দুই কিলোমিটার সড়কপথ ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশের পরিবহনের ভিড়ে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। বিভীষিকাময় যানজটের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলছে সাধারন শ্রমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মজীবি মানুষ। সড়কপথের দু’পাশে সারিবদ্ধ ট্রাকের ভিড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জনচলাচল। চরম দূর্ভোগের শিকারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সরকারী-বেসরকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তারা।প্রতিনিয়ত ভোমরা বন্দর সড়কে ভয়াবহ যানজট পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোনো দিকভাল। ভোমরা থেকে সাতক্ষীরা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থা ভোমরা বন্দর সড়ক। আর এ সড়কপথে জনসাধারনের যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থা লেগুনা, মাহিন্দ্র, সিএনজি ও ইজিবাইক। কিন্তু ব্যাপক যানজটের কারনে লেগুনা, মাহিন্দ্র, সিএনজি ও ইজিবাইক চালকরা কাষ্টম সংলগ্ন স্ট্যান্ড ছেড়ে এক কিলোমিটার দুরে ফুলতলা নামক স্থানে অবস্থান করে। স্থানীয় ও দূরবর্তী জনসাধারন যানজটের কবলে পড়ে পায়ে হেঁটে চলে আসে এখানে।এরপর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখান থেকে তারা লেগুনা, মাহিন্দ্র, সিএনজি ও ইজিবাইকের মাধ্যমে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়। বন্দর সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসির অভিযোগ, করোনা সংক্রমিত রোগী, হৃদরোগী, ব্রেনস্ট্রোক ও গর্ভবতীদের দ্রæত চিকিৎসার লক্ষ্যে সাতক্ষীরায় অ্যামবুলেন্স খবর দিলে যানজটের কারনে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় মারা যায় অনেক রোগী। সুষ্ঠু স্থলযোগাযোগ ব্যবস্থায় যাতায়াত ও মালামাল আনা নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপত্তিকর যানজট অবস্থা। দূর্বিষহ যানজট পরিস্থিতির মধ্যে ট্রাক চালকরা দ্রæত ও আগে যাওয়ার জন্য ওভারটেকিং এর অসম প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে অহরহ। রয়েছে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকের অপ্রতুলতা। ফলে সীমাহীন যানজট উপেক্ষা করে ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে বেগতিকভাবে গাড়ি চালানোর কারনে ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা, অকালে ঝরে যায় তাজা প্রান, শূণ্য হয়ে যায় কত পিতামাতার বুক, স্ত্রী হারায় তার স্বামীকে, সন্তান হারায় তার পিতাকে এবং পিতা হারায় তার সন্তানকে। আর যারা বেঁচে থাকছে তারাও পঙ্গু হয়ে অভিশপ্ত জীবনের বোঝা হয়ে বেড়াচ্ছে।এমনই বিপর্যয়ের প্রতি মুহূর্তে যানজটের শিকার হচ্ছে পথচারী, দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ জানায়, ভোমরা বন্দর সড়কটি এক মাস পূর্বে যানজটমুক্ত ছিলো।বন্দর যানজট নিরসন কমিটির স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের উদ্যোগে বন্দর সড়ক থেকে বাংলাদেশ-ভারতের যাবতীয় খালি ট্রাক বন্দরের পরিত্যক্ত জায়গায় পার্কিং করে রাখা হতো। বর্তমানে সে ব্যবস্থা না থাকায় পুনরায় ট্রাক চালকরা সড়কের উপর এলোমেলোভাবে গাড়ি রাখার কারনে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে ভোমরা বন্দর সড়কে ভয়াবহ যানজট ও সড়ক সংস্কার অব্যবস্থাপনার কারণে বেহাল অবস্থায় প্রতিনিয়ত পাল্টি খাচ্ছে ভারত থেকে আমদানীকৃত পণ্যবোঝাই ট্রাক।পাল্টির এক পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যভর্তি বস্তাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রাস্তার স্থায়ী জলাবদ্ধতার পানির উপর। পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার আমদানী পণ্য। দিনের পর দিন এই দূর্বিষহ অবস্থা চললেও কর্তৃপক্ষ সড়ক সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য বন্দর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে আগ্রহী হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান ভোমরা বন্দর সড়কটির বেহাল অবস্থার দৃষ্টে ভারত থেকে আমদানী হওয়া বিভিন্ন প্রকারের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো সড়কের খাঁদে পড়ে পাল্টি খাচ্ছে।বিপুল পরিমাণে নষ্ট হচ্ছে আমদানী পণ্য। ফলে ব্যবসায়ীরাও শিকার হচ্ছে আর্থিক ক্ষতির। এছাড়া সিএন্ডএফ এজেন্টের আরো কর্মকর্তারা জানান, কাষ্টম সংলগ্ন বন্দর সড়কটির সমতা না থাকায় প্রতিনিয়ত আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ভারসাম্য হারিয়ে পাল্টি খেয়ে খাঁদে পড়ছে । মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমদানীকারক ব্যবসায়ীরা। একদিকে ভয়াবহ যানজট অন্যদিকে সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে বন্দর সড়কটি এখন হুমকির সম্মুখীন। জিরোপয়েন্ট ভোমরা এলাকা থেকে বিজিবির বাঁশকল চেকপোস্ট(ফুলতলা) পর্যন্ত সড়কটি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমদানী-রপ্তানী পণ্যবাহী ট্রাকের ভিড়ে দখল হয়ে যায় বন্দর সড়ক। সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। রাস্তা ক্রসিংয়ে পাশে কোনো জায়গা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে জনসাধারন।সড়ক পথের এ অচলাবস্থায় গাড়ি পাল্টির বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যেও চলাচল করতে হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষদের। যেকোনো মূহুর্তে গাড়ি পাল্টিতে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কায় ভুগছে বন্দর সংশ্লিষ্ট লোকজন। প্রবল বর্ষনে বন্দর সড়কের অবস্থা এখন বিপদাপন্ন। সড়কের উপর পিচ, ইট, বালু ধ্বসে যেয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এসব গর্তে পানি জমে তৈরি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। জনসাধারন ও গাড়িচালকরা জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তার খাঁদে পড়ে প্রতিদিন মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে তারা। সড়ক চলাচল অব্যবস্থাপনার কারণে জরুরী খাদ্য সরবরাহে পড়ছে বাঁধা। এছাড়া ভারত থেকে আমদানীকৃত পঁচনশীল পণ্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্রæত বাজারজাত করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সড়ক অচলাবস্থার পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক যানজট। সড়ক ও জনপদ বিভাগের চরম অবহেলায় ভোমরা বন্দর সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত, এমন অভিযোগ করেছেন ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।