১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার,রাত ১১:৫০

পাকিস্তানকে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২

  • শেয়ার করুন

শেষ ভালো যার, সব ভালো তার—শ্রীলঙ্কার জন্য এই একটি বাক্যটিই যথার্থ। টুর্নামেন্টের শুরুটা যাদের হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো সেই শ্রীলঙ্কাই শেষ পর্যন্ত পরল এশীয় শ্রেষ্ঠাত্বের মুকুট। দলে বড় তারকার ছড়াছড়ি নেই। টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও যাচ্ছেতাই। এশিয়া কাপ শুরুর আগেও এই শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে বাজি ধরতে সাহস করতেন না কেউ। শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছিল বলতে গেলে শূন্যের কোটায়।

প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ধরাশায়ী হওয়ার পর লঙ্কানদের সম্ভাবনা আরও উবে যায়। কিন্তু পুরো বিশ্ব না ভাবলেও দাসুন শানাকার দল বোধ হয় ভেবেছিল। আত্মবিশ্বাস ছিল, তাদের পক্ষে সম্ভব।

নাহলে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়! ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান-যে দলই সামনে পড়েছে-স্রেফ উড়ে গেছে লঙ্কানদের সাহসিকতার সামনে। পাকিস্তানকে তো সুপার ফোর পর্বের শেষ ম্যাচেও হারিয়েছিল।

এবার ফাইনালে আরও একবার পাকিস্তানবধের গল্প লিখলো লঙ্কানরা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ‘আন্ডাররেটেড’ দল হয়েও জিতে নিলো এশিয়া কাপের শিরোপা।

আজ রোববার এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাট হাতে ৭১ রানের ইনিংসে জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া ভানুকা রাজাপাকসে হয়েছেন ফাইনাল সেরা।

এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুললো শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপের ফাইনাল মঞ্চে ২০১৪ সালেও মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। সেবারের দেখায় পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে শ্রীলঙ্কা। এবারও একই ঘটনা ঘটল। তৃতীয় শিরোপার আশা নিয়ে ফাইনালে ওঠা পাকিস্তান বাজে ফিল্ডিং আর এলোমেলো ব্যাটিংয়ে ফিরল শূন্য হাতে।

এশিয়া কাপের এবারের আসর হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কায়। দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আর্থিক সঙ্কটের জন‍্য সরিয়ে নেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। কঠিন সময়ে দেশবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন দাসুন শানাকার দল।

এদিন টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭০ রান সংগ্রহ করেছে শ্রীলঙ্কা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭১ রানের ইনিংস খেলেছেন রাজাপাকসে। ৪৫ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ৬ বাউন্ডারি আর তিনটি ছক্কা।

জবাব দিতে নেমে ১৪৭ রানে থেমে যায় পাকিস্তান। প্রথম ওভারে শূন্য বলে ৯ রান পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা। বরাবরের মতোই ব্যর্থ হন বাবর আজাম। ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়া বাবর আজ ফেরেন ৫ রানে।

উইকেটে এসে শূন্যতে বিদায় নেনে ফখর জামানও। এক ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে শুরতেই চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। সেই চাপ সামলে পাকিস্তানের হাল ধরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।

বাকিদের নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন। ৪৭ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু তাঁর লড়াই জয়ের জন্য যথেষ্ঠ ছিল না। মন্থর ব্যাটিং আর বাকিদের দায়িত্বহীনতায় হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাবর আজমের দল। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা রিজওয়ান করেছেন ৫৫ রান।

অথচ আগে বোলিং নেওয়া পাকিস্তানের শুরুটা আজ হয়েছে দুর্দান্ত। বোলিং ইনিংসের শুরুতেই পাকিস্তান পায় সাফল্য। প্রথম ওভারেই কুশল মেন্ডিসের উইকেট তুলে নেন নাসিম শাহ। তরুণ এই পেসারের গতিতে পরাস্থ হয়ে গোল্ডেন ডাকে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার।

আরেক ওপেনার পাথুম নিশানকাকে থামান হারিস রউফ। পাকিস্তানি পেসারের করা দ্বিতীয় বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে অধিনায়ক বাবরের হাতে ধরা পড়েন পাথুম। ১১ বলে ১ চারে ৮ রান করে যান তিনি।

নিজের পরের ওভারে এসে আবারও রউফের আঘাত। এবার ফিরিয়ে দেন দানুস্কা গুনালিথাকাকে (১)। পাকিস্তানি পেসারের গতিময় বলে এলোমেলো হয়ে যায় লঙ্কান ব্যাটাররের স্টাম্প।

পাওয়ার প্লেতে তিনটি উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৪২ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। পাওয়ার প্লের পরপরই ইফতেখারের বলে কাটা পড়েন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। থিতু হওয়া ডি সিলভাকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন ইফতেখার। ৪ বাউন্ডারিতে ২১ বলে ২৮ রান করেন তিনি।

এরপর বোলিংয়ে এসে অধিনায়ক দাসুন শানাকার (২) স্টাম্প ভাঙেন শাদাব খান। মাত্র ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সেই চাপ সামলে লঙ্কানদের দারুণ ইনিংস উপহার দেন রাজাপাকসে। প্রথমে হাসারাঙ্গাকে নিয়ে জুটি গড়েন, এরপর এগিয়ে নেন করুনারত্নেরকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসে চড়ে শেষ পর্যন্ত শক্ত পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৭০/৬ (কুশল ০,নিশানকা ৮, গুনাথিলাকা ১, সিলভা ২৮, শানাকা ২, হাসারাঙ্গা ৩৬, রাজাপাকসে ৭১, চামিকা ১৪ ;নাসিম ১/১১, রউফ ৩/২১, শাদাব ১/১২, ইফতিখার ১/১৩) ।

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৭/১০ (বাবর ৫ ফখর ০, ইফতেখার ৩২, নেওয়াজ ৬, রিজওয়ান ৫৫, আসিফ ০, খুশদিল ২, শাদাব৮, নাসিম ৪, রউফ ১৩; মাদুশান ৪/৩৪, হাসারাঙ্গা ৩/২৬, চামিকা ২/২৫, থিকশানা ১/২৫)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ২৩ রানে জয়ী এবং চ্যাম্পিয়ন।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন