প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২২
কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলের দুর্দান্ত জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। আর এ জয়ে ‘সি’ গ্রুপের সেরা হয়েই শেষ ষোলো পর্বে পা রেখেছে আলবিসেলেস্তারা। হেরে যাওয়া পোলিশরাও নকআউট পর্বে উঠেছে।
গ্রুপের অপর ম্যাচে মেক্সিকো সৌদি আরবকে ২-১ ব্যবধানে হারায়। তবে এক গোলের পার্থক্যের কারণে তৃতীয় হয়ে শেষ করতে হয় মেক্সিকোকে। ম্যাচের দীর্ঘ সময় মেক্সিকো ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও সৌদি যোগ করা সময়ে এক গোল শোধ করেন। আর্জেন্টিনা ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট করে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পোল্যান্ড ও মেক্সিকো। সৌদি ৩ পয়েন্ট নিয়ে তলানি থেকে শেষ করেছে।
গ্রুপ সি’তে চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর্জেন্টিনা আগামী শনিবার রাত একটায় ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআপ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে। আর রোববার রাত ৯টায় ‘ডি’র চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে পোল্যান্ড।
প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিসে এগিয়ে যাওয়া হয়নি আলবিসেলেস্তাদের। সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়ে দুদল। তবে বিরতির পর প্রথম গোলটি করেন অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্তার। আরদ্বিতীয় গোলটি আসে হুলিয়ান আলভাসেরে পা থেকে।
বুধবার রাতে দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ‘সি’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। তবে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসলেও পোল্যান্ড গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যাসনি দেয়ালের কাছে বার বার থামতে হয় স্কালোনির শিষ্যরাদের। এমনকি মেসির পেনাল্টিও দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন তিনি।
যদিও পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনারই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। বল দখলে তারা ৭৪ শতাংশ এগিয়ে ছিল। আর ম্যাচে মোট ২৩টি শট নেয়। যার ১২টিই ছিল গোলমুখে। যেখান থেকে ২টি গোল আদায় করে নেয়। অপরদিকে রক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত থাকা পোল্যান্ড মাত্র ৪টি শট নিতে পারে। এর কোনোটিই লক্ষ্যে ছিল না।
এদিন ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই ভালো সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। মেসি শট নিলেও তেমন জোর ছিল না, অনায়াসে ঠেকান স্ট্যাসনি। তিন মিনিট পরেই মেসির দুররূহ কোণ থেকে নেওয়া শট রুখে দেন।
আর্জেন্টিনা ২৮তম মিনিটে পরপর দুটি ভালো সুযোগ তৈরি করে। প্রথমে হুলিয়ান আলভারেসের শট রক্ষণে প্রতিহত হওয়ার পর আকুনিয়ার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরাল শট পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। এরপর ৩২তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল তারা, আনহেল দি মারিয়ার কর্নারে বাঁক খেযে বল দূরের পোস্টে যাচ্ছিল, কর্নারের বিনিময়েই ঠেকান স্ট্যাসনি।
৩৭তম মিনিট মেসির পেনাল্টি মিসে আর্জেন্টিনা শিবিরে হতাশা যোগ হয়। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের একটি আক্রমণ রুখতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত মেসির মুখে আঘাত করে বসেন স্ট্যাসনি। ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টি দেয় রেফারি। কিন্তু মেসির শট অসাধারণ নৈপুণ্যে ঠেকিয়ে দেন স্ট্যাসনি।তবে আর্জেন্টিনা সে ভয়, সে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডের পারফর্ম্যান্সে।
প্রথমার্ধে আক্রমণের পসরা সাজিয়েও পরম অরাধ্য গোলের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। ফলে ০-০ স্কোরলাইন নিয়েই বিরতিতে যায় দুদল। দ্বিতীয়ার্ধে শেষ হয় মেসিদের অপেক্ষার প্রহর, ৪৭ মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। নাহুয়েল মলিনার ক্রস থেকে নিঁখুত ফিনিশিংয়ে গোল করেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার।
৫০ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে কামিল গ্লিকের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সমতায় ফেরার সুযোগ হারায় পোলিশরা। তিন মিনিট বাদে অতিমানবীয় ড্রিবলিংয়ে মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে পোল্যান্ড গোলবারের একদম কাছাকাছি পৌঁছে যান মেসি। তবে ঠিকমতো শট চালাতে না পারলে স্মরণীয় এক গোলের সাক্ষী হবার থেকে একটুর জন্য বঞ্চিত হয় ভক্তরা। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে আরও দুবার লেভানদোভস্কিদের বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই দেখা মিলেছে দারুণ ছন্দময় মেসির। ৫৯ মিনিটে জোড়া বদলী মাঠে নামান স্কালোনি। ৬১ মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্টার আবারও ভীতি ছড়ান পোলিশ রক্ষণে। তিন মিনিটে বাদে মেসি বল পেয়ে স্বভাবসুলভ ড্রিবলিংয়ে আবারও ঢুকে পড়েন বক্সে, তবে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছয়নি তার শট।
৬৮ মিনিটে আর্জেন্টিনার পক্ষে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আলভারেজ। ফার্নান্দেজের পাস থেকে গোল করেন ২২ বছর বয়সী ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড। তিন মিনিট বাদে আবারও একটুর জন্য গোলবঞ্চিত হন মেসি। এবারও পথের কাঁটা হয়ে দাড়ান শেজনি। ৭৪ মিনিটে গতির ঝলকে বক্সে ঢুকে বাড়ানো বল ধরে ফেলেন আলভারেজ। কিন্তু গোলের বাইরে শট নিয়ে হারান দ্বিতীয় গোলের সুযোগ।
৭৯ মিনিটে মাঠে নামেন লাউতারো মার্তিনেজ। ৮৬ মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর যোগ করা সময়েও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে আর্জেন্টিনা। ৯২ মিনিটে চিপ করেন বদলী নিকোলাস তাগলিয়াফিকো, শেজনির হাত লাগলেও বল জড়িয়ে যাচ্ছিল জালে। প্রায় গোললাইন থেকে হেড করে বল ফিরিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পায় পোল্যান্ড। অবশিষ্ট সময়েও খেলার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে আর্জেন্টিনা। শেষ বাঁশি বাজলে উল্লাসে ফেটে পড়ে আলবিসেলেস্তে ডাগআউট।