২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,দুপুর ১:৫৬

কল ড্রপ হলেই ক্ষতিপূরণ পাবেন গ্রাহক, ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২

  • শেয়ার করুন

কথার মধ্যে হঠাৎ ফোনের ভেতরে শব্দ, এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন (কল ড্রপ)…। অননেট অথবা অফনেট শহর কিংবা গ্রাম- সব জায়গায় কল ড্রপ ভোগান্তিতে রয়েছে গ্রাহকরা। এখন থেকে একই অপারেটরে কথা বলার সময় প্রথম কল ড্রপ হলেই গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পাবেন। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।কল ড্রপ হলে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দিতে মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আয়োজিত মোবাইল ফোনে কলড্রপ ও এর ক্ষতিপূরণ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের মে মাসের কলড্রপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ চিত্র তুলে ধরা হয়।

কল ড্রপ হলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে টকটাইমও ফেরত দেওয়া। একই সঙ্গে গ্রাহক চাইলে নিজেও জানতে পারবে অপারেটররা তার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে কি না। তবে ক্ষতিপূরণের এ সুবিধা মিলবে শুধু অননেটে কথা বললে এবং দিনে সর্বোচ্চ সাতবার।

বিটিআরসির তথ্য মতে, দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক ১৭ কোটি ৬৩ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১২ কোটি গ্রাহক মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বিপুলসংখ্যক গ্রাহক সত্ত্বেও মোবাইল অপারেটরগুলো যথাযথভাবে সেবার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও সে অর্থে কম। তা সত্ত্বেও গ্রাহককে নিয়মিতই নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

অপারেটরদের সেবার মান নিয়ে গত দুই বছরে বিটিআরসিতে ২৫ হাজারের বেশি ৯৫টি অভিযোগ করেছে গ্রাহকরা। এর মধ্যে অসহনীয় মাত্রায় কল কেটে যাওয়া (ড্রপ), ইন্টারনেটে ধীরগতি, বিভিন্ন প্যাকেজের ফাঁদ, গ্রাহকের অজান্তে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস চালু করে টাকা কেটে নেওয়া- এ রকম অভিযোগই বেশি।

বিটিআরসি কর্তৃক টেলিকম পরিষেবার গুণমান মূল্যায়নের জন্য গঠিত কমিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্রাহকরা ৫২ দশমিক ৫৯ কোটিবার কল ড্রপের শিকার হয়েছেন। এতে মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের প্রায় ১৮ দশমিক ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কল ড্রপ তখনই ঘটে যখন কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরের সিগন্যাল দুর্বল থাকে।

এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, ‘কল ড্রপের জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে কমিশন সভায় অ্যাপ্রুভও হয়েছে। ১ অক্টোবর থেকে গ্রাহকরা অননেট কল ড্রপের ক্ষতিপূরণ পাবে। কল ড্রপ হলে একজন গ্রাহক ১০ সেকেন্ড হারায় সেই হিসেবে পরবর্তী কলে ১০ পয়সা টকটাইম ফেরত দেওয়া হবে। ১ অক্টোবর থেকে যদি কোনো গ্রাহক জানতে চান গত এক দিনে বা এক সপ্তাহে তার কতটি কল ড্রপ হয়েছে তাহলে তিনি জানতে পারবেন। ওই ভাবে কারিগরি অ্যারেঞ্জমেন্ট করার জন্য আমরা ১৫ দিন সময় দিয়েছি। টেকনিক্যাল প্রিপারেশনের একটা বিষয় আছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আগেও ছিল- তবে মানুষ বুঝতে পারত না। অপারেটররা বলত ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। মানুষ বিশ্বাস করতে পারত না সে পাচ্ছে কি না। এখন বিশ্বাস করতে পারবে। তবে এটা শুধু অননেট কলের জন্য। যেমন জিপি টু জিপি ফোন, রবি টু রবি এ রকম কল ড্রপ হলে এই ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে কল ড্রপ হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।’

বিটিআরসির পরিসংখ্যান বলছে, একজন গ্রাহকের নরমালি এক দিনে সর্বোচ্চ দুই-তিনটার বেশি কলড্রপ হয় না। পয়েন্ট ২/১ পারসেন্ট হতে পারে এর বেশি হয় না। ৯৯.৯৫ পার্সেন্ট কলই রিটার্ন পাবে। সর্বোচ্চ সাতবার কল ড্রপের ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। অপারেটররা এসএমএস দেবে এবং একজন গ্রাহক জানতে চাইলে তিনিও পারবেন। এরপরও ক্ষতিপূরণ না দিলে বিটিআরসির কাছে অভিযোগ করবে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে অপারেটরগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনলাইনে যুক্ত হয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন ‘কল ড্রপ হলে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অপারেটররা গ্রাহকদের চার্জ কাটে সুতরাং সেটি ফেরত দিতে হবে। এটা যুক্তিসঙ্গত।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বিটিআরসিকে কল ড্রপ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। একই সঙ্গে নির্দেশনা দিয়েছিলাম যাতে গ্রাহকরা কল ড্রপের ক্ষতিপূরণ পায় এবং গ্রাহককে অবহিত করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

মন্ত্রী আরও বলেন গ্রাহক যেন নির্বিঘ্ন সেবা পায়, সে উদ্দেশ্যেই এই নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। অপারেটররা যেন সেবার মান বাড়িয়ে ক্ষতিপূরণ থেকে রেহাই পান, বিটিআরসি সেটাই চাচ্ছে।’
বিটিআরসি নতুন এই নির্দেশনা শুধু একই অপারেটরের মধ্যে কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিটিআরসি জানিয়েছে, অন্য অপারেটরে ভয়েস কলের ক্ষেত্রে তিনটি পক্ষ কাজ করে। কল ড্রপের জন্য কোন পক্ষ দায়ী, তা খুঁজে বের করে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিটিআরসি কাজ করছে।

বিটিআরসির সচিব মো. নূরুল হাফিজের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন