প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২০
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী কুমার শানু। তার নানা ভাষার গান মুগ্ধ করে রেখেছে কোটি কোটি মানুষ। বিশেষ করে হিন্দি ও বাংলা গানে কয়েকটি প্রজন্মকে তিনি আচ্ছন্ন করে রেখেছেন মিষ্টি গায়কীর জাদুতে। সেই কুমার শানু বাংলাদেশেও দারুণ জনপ্রিয়। এদেশের বহু সিনেমায় তার জনপ্রিয় গান রয়েছে।
মজার কথা হলো এদেশের গানে তার যাত্রাটা হয়েছিলো ঢালিউডের প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের জন্যই। সেই গল্প একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে নিজেই জানিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর।
তিনি সেই গল্পে বলেন, শিবলী সাদিকের পরিচালনায় ‘তিন কন্যা’ সিনেমাটিতে যখন গান হয়, তখন বাংলাদেশের তিন সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী, সুজেয় শ্যাম আর আলম খান কলকাতায় কাজ করছিলেন। এন্ড্রু কিশোরেরও সেখানে গান গাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে একটা শো করতে গিয়ে পাসপোর্ট জটিলতায় সেখানে প্রায় ২০/২৫ দিন আটকে গেলেন। পরে দেশে এসে বাসায় একটি চিঠি পেয়ে ইন্ডিয়ান ভিসা করে জরুরিভাবে কলকাতায় গেলেন। সেখানে গান নিয়ে তার জন্য তিনটি পার্টি অপেক্ষা করছিলো।
যেতে দেরি হওয়ায় কেদার ভট্টাচার্য নামের এক শিল্পী এরই মধ্যে ‘তিন কন্যা’ ছবির গান গেয়ে ফেলেছেন। যিনি পরবর্তী সময়ে ‘কুমার শানু’ নামে পরিচিতি পান। সুজেয় শ্যামের একটা-দুটা গান গাওয়ার পর তৃতীয় গানটা গাওয়ার জন্য যখনই কুমার শানু প্রস্তুত, তখন এন্ড্রু কিশোর গিয়ে স্টুডিওতে হাজির হলেন।
এন্ড্রু কিশোরকে দেখে একজন বললেন, ‘আমাদের শিল্পী এন্ড্রু চলে এসেছে, ওই ছেলেকে বের করে দাও।’ তখন এন্ড্রু কিশোর বললেন, ‘না, এটা হতে পারে না। উনি একজন শিল্পী। আমি তো এটা করতে পারি না।’
কুমার শানু তখন বাইরে এসে বলল, ‘তোমারই গান দাদা, প্রডিউসার চাইছে, তুমি গান গাইবে না কেন? আমি তোমার তিন-চারটা গান গেয়ে ফেলেছি দাদা। আমার আর দরকার নেই। আমার জীবনে রেডিওতে গান গাইনি, কোথাও গান গাইনি। তোমার দেরি হওয়ায় সিনেমায় প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলাম। ব্যস, মেরে দিলাম।’
এই কথা কুমার শানু আজো মনে রেখেছে। পৃথিবীর যে জায়গাতেই এন্ড্রু কিশোর গিয়েছেন, শানু আশপাশে থাকলে নিজে থেকে এসে তার সঙ্গে দেখা করেছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন। এটা ছিলো এন্ড্রু কিশোরের দাবি। তবে তিনি যে ৬ জুলাই না ফেরার দেশে চলে গেছেন সেই খবর কুমার শানু পেয়েছেন কী না কে জানে! তার ফেসবুক-টুইটার কোথাও এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে কোনো শোক নেই।