প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১
মোংলা বন্দর প্রতিনিধিঃ শ্রমিক অসন্তোষ, ঘন ঘন ধর্মঘট! তার ওপর দিনের পর দিন জাহাজ শূণ্য পশুর চ্যানেল। কর্মহীন হয়ে না খেয়ে শ্রমিকদের আত্বহত্যা অভিশপ্ত সেইসব স্মৃতি এখন অতীত। বাস্তবতা জানান দিচ্ছে সেই পশুর চ্যানেলে সারি সারি জাহাজে কাজ
করতে করতে শ্রমিকরা ক্লান্ত। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র মোংলা বন্দরের বাস্তব এই দৃশ্যে সর্বোচ্চ জাহাজ আগমন হয়ে গড়েছে নতুন রেকর্ডও।
একসময় এই বন্দরকে মৃত ঘোষনা করে এটির ভবিষ্যৎ শেষ করে দেয় তৎকালীন বিএনপির জোট সরকার। খাদের কিনার থেকে টেনে সেই বন্দরের অবস্থার ভাগ্য ফিরিয়েছে বর্তমান সরকার। আর এটি না করতে পারলে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের আহাজারি রুপ নিতো দূর্ভিক্ষে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের কথা এটি।
এখন সংকট কাটিয়ে বর্তমান সরকার ও কর্তৃপক্ষের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। বন্দরের সুবিধাদি বৃদ্ধির জন্য ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এদিকে, পদ্মাসেতু ও খুলনা-মোংলা রেলসেতু এবং রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাওয়ায় মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক দেশের শিল্প-বাণিজ্যের অমিত সম্ভাবনার নতুন দিগস্ত সূচিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে শুরু করেছে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে মোংলা বন্দরের প্রতি। এতে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে গোটা বন্দর এলাকা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত মোংলা বন্দর ৪৯৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময় বন্দরে ৩ হাজার ৭০০টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মোংলা বন্দর ৬৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ বছর বন্দরে ৪৮২টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৭৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জন হয়েছে। এ বছর বন্দরে ৬২৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১০৯ কোটি ৩৩ লাখ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জন হয়েছে। এ বছর বন্দরে ৭৮০টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৩৩ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন হয়েছে। এ বছর বন্দরে ৯১২টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। এছাড়া সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১১৭ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন হয়েছে। এই বছর বন্দরটিতে ৯০৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, ২০০৯ সালের শুরুতেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে মৃতপ্রায় মোংলা বন্দরকে কার্যক্ষম ও কর্মচঞ্চল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯
সালের জুন মাস থেকে এ বন্দরের মাধ্যমে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসমূহের নির্দেশনা, বন্দর উপদেষ্টা কমিটি ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সুপারিশ এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বন্দর ব্যবস্থাপনায় মোংলা বন্দর ধীরে ধীরে গতিশীলতা অর্জন করতে থাকে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বন্দরের নাব্যতা সংকট কাটিয়ে উঠেছি। এখন বন্দরের হারবাড়িয়ায় ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারছে। আগামী বছরের প্রথম থেকেই বন্দরের মূল জেটিতেও এসব জাহাজ ভিড়তে পারবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, এই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১৮টি উন্নয়ন প্রকল্পসহ ৫০টির অধিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন ও তিনটি প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় আছে। মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের দ্রুত ও দক্ষ সেবা প্রদানে যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে- ৭০টি কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ৮০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল স্থাপন, ৩টি কার ইয়ার্ড নির্মাণ, ১০টি বিভিন্ন ধরনের সহায়ক জলযান ক্রয়, ৬২টি বিভিন্ন ধরনের লাইটেড বয়া, ২টি রোটেটিং বিকন, ৬টি জিআরপি লাইট টাওয়ার সংগ্রহ ও স্থাপন, একটি মোবাইল হারবার ক্রেন, একটি স্টাফিং-আনস্টাফিং শেড, একটি ওয়েব্রিজ মোবাইল স্ক্যানার সংগ্রহ। এ ছাড়া রুজভেল্ট জেটির বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে বর্তমানে মোংলা বন্দরে ১০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসবের বাইরে পোর্টের অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম সংগ্রহ পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং, সহায়ক জলযান সংগ্রহ, বর্জ্য নি:সৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ থেকে পিপিপি’র আওতায় মোংলা বন্দরের ২টি অসম্পূর্ণ জেটির নির্মাণও কাজ শেষ করা হবে ২০২১ সালের মধ্যে।
চলমান এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো। যোগ করেন পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম।