২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,রাত ১০:১১

আওয়ামীলীগ আত্নগোপনে; মাঠ দখলে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

আবুল হাসান, মোংলা : শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় চলছে রাজনৈতিক মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের কাছাকাছি গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করছেন দল দুটির নেতারা। প্রতিদিনই তারা নানান জায়গায় সমাবেশ করছেন। ওই সমাবেশে স্থানীয় নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। ওইদিন থেকেই সারা দেশে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর বাড়িঘরসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত-রাজনৈতিক কার্যলয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। সরকার পতন ও বিরোধীদের হামলা থেকে বাঁচতে ৫ আগস্ট থেকেই মোংলার বেশিরভাগ বড় নেতা আত্মগোপনে চলে যান। গাঁ ঢাকা দেন কর্মীরা। আত্মগোপনে থাকায় দলীয় কার্যক্রম হচ্ছেনা। এমনকি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরেও উপজেলার কোথাও কোনো কর্মসূচি ছিল না টানা ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দলটির। এদিকে ক্ষমতার পালাবদলে রাজনীতির মাঠে চাঙ্গা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমানসহ সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান জসিম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সুনিল কুমার বিশবাস, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম হাওলাদার ও ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সমর্থিত পাঁচ চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মিরা আতœগোপনে চলে যান। গাঁ ঢাকা দিয়েছেন আওয়ামী সমার্থিত পৌরসভার কাউন্সিলর ও ইউপি সদস্যরাও(মেম্বর)। তবে নিয়মিত কার্যালয়ে আসছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার ও তার পত্নী সোনাইলতলা ইউপি চেয়ারম্যান নাজরিনা বেগম।

এদিকে গত ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত কোন কর্মসূচি পালন করেনি স্থানীয় পৌর ও উপজেলা আওয়ামীলীগ। এমনকি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনেও কোনো কর্মসূচি ছিল না তাদের। শহরের শেখ আব্দুল হাই সড়কে হামলা করে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলগের কার্যলয়। জানতে চাইলে এ বিষয়ে পৌর আওয়ামীলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক নেতা-কর্মিরা আতœগোপনে থাকার কারণে এই মূহুর্তে কোন কর্মসূচি করা যাচ্ছেনা’।

রাজনীতির পথের কাঁটা সরাতে গত ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। জামায়াত নিষিদ্ধ করার চার দিন পর ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপরই সারা দেশে কোনো রকমের দ্বিধাদ্বন্ধ ছাড়াই প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।

মোংলা উপজেলায়ও দীর্ঘদিন পর রাজপথে প্রকাশ্যে এসে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনীতি করতে চায় তারা। দলটির মোংলা উপজেলা কমিটির সেক্রেটাররী ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক কহিনুর সরদার বলেন, ‘আমরা সব সময় রাজনীতিতে সহবস্থান নীতি অবলম্বন করতে চাই। অসম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ^াসী। এখানে সংখ্যালঘু বলতে কোন মানুষ নাই, সবাই আমরা এক দেশের মানুষ। গত ৫ আগষ্টের পর এখানে হিন্দু ধর্মের মানুষের জানমাল এবং তাদের মন্দিরের নিরাপত্তা দিতে তাদের কর্মিরা রাত জেগে ছিল। কোন হিংসা-বিবেধ এমনকি প্রতিশোধ পরায়নের রাজনীতি কখনোই জামায়াত ইসলামের আদর্শে নাই।

বাগেরহাট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এ্যাডঃ মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন,‘ আওয়ামী সরকার আমাদের সঙ্গে যা করেছিল তা মোটেও যুক্তিযুক্ত ছিল না। ছাত্রদের ক্ষোভ আমাদের ওপর ঝেড়ে পাশ^বর্তী একটি দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে পরিকল্পিতভাবে আমাদের দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়া শেখ হাসিনা সরকার দমন-পীড়ন, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, পুলিশি হয়রানিসহ সব ধরনের নির্যাতন করে আমাদের কোণঠাসা করে রেখেছিল। জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার আমাদের নেতাকর্মীরা জামায়াতের আদর্শ ছেড়ে যাননি’।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই চাঙ্গা ভাব ফিরে এসেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মধ্যে। পৌর বিএনপির আহবায়ক জুলফিকার আলী বলেন, ‘বিএনপি গন মানুষের দল। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দি রেখেও বিএনপিকে শেষ করা যায়নি। শহীদ জিয়ার আদর্শে দলের প্রতিটি কর্মি ছিল ঐক্যবদ্ধ। দেশে সত্যিকারের গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জাতীয়তাবাদীর শক্তি তথা বিএনপির বিকল্প নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য রাজনীতির মাঠ গোছানো হচ্ছে’।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক ডক্টর ফরিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ মুক্ত হয়েছে। বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর মুক্তমনে রাজপথে ফিরতে পেরে খুশি নেতাকর্মীরা। এখন অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরে আসবে বলে আমাদের ধারণা। আমরাও সেই অনুপাতে কাজ করে যাচ্ছি। তাই আমরা উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে রাজপথে নেমেছি।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন