২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার,সকাল ১০:২৯

অনলাইন ব্যবসা পথ দেখাচ্ছে তালার নারী-পুরুষ উদ্যোক্তাদের

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

হাসান আলী বাচ্চু, তালা:

সাতক্ষীরায় অনলাইন ভিত্তিক নারী-পুরুষ উদ্যেক্তাদের অনলাইনে ব্যবসায় ভাগ্য বদলাচ্ছে উদ্যোক্তাদের। গত তিন-চার বছর ধরে পোশাক, আচার, আম, লিচু কেকসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, অর্গানিক অয়েল, বিভিন্ন রকমের মধু, চুই ঝাল, কসমেটিক্স, জুয়েলারী, হাতের তৈরি খাবারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রে নানান পণ্যের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে।

ডিজিটাল প্লাটফর্ম হিসেবে ফেসবুক ভিত্তিক পেইজে যুক্ত হয়ে ব্যবসা পরিচালনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জেলার অনেক নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা। এতে ঘরে বসেই পরিবারের কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। অল্প পুঁজিতেই নারীরা ও পুরুষেরা অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে সফল হয়েছেন। কেউ কেউ ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় করছেন প্রতি মাসে। জেলার প্রায় দুই থেকে তিন শতাধিক নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তা এভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছেন। দিন দিন বাড়ছে এদের সংখ্যা। বিশেষ করে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন মৌসুমি ফলের উপর নির্ভর করে অনলাইন উদ্যোক্তা বেড়েই চলেছে। আমের সময়, লিচুর সময় লিচু, মাছের সময় মাছ এবং সারা বছর হরেক রকমের পণ্য নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তারা।
ঘরে বসে না থেকে নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলতে না হয় সেজন্যই নারীরা অনলাইন ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন দিনকেদিন। ঘরে বসেই সব সামলানো যায় বলে তারা এদিকে ঝুকতে থাকেন। এ ধরনের ব্যবসায় জড়িত থেকে নারীরা ঘরে বসেই যেমন উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি ক্রেতারাও ঘরে বসে তাদের পণ্যটি বুঝে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ই-কমার্স। গত কয়েক বছরে অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসার বিশাল একটি বাজার গড়ে উঠেছে। আর দেশের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। তবে পিছনে নেই পুরুষরাও।
স্থানীয়ভাবে মূলতঃ অনলাইনে মানুষের খাদ্যপণ্য ও পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে অনেক নারী ও পুরুষ ঘরে বসে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। যা এখনো ধরে রেখেছেন এসকল উদ্যোক্তারা।
সাতক্ষীরা সদরের সুলতানপুরের নারী উদ্যোক্তা তাজমিন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে জেলা ও জেলার বাইরে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ছোট বেলা থেকে ইচ্ছে ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করবো। কোথাও চাকরি করলে অন্যের অধীনে কাজ করতে হয়। আমার লক্ষ্য ছিল অন্যের অধীনে কাজ না করে নিজে নিজে কিছু একটা করার। ২০১৯ সালে আমার স্বামীর পরামর্শে ‘প্রত্যাশা’ নামে একটি ফেসবুক ফেজ খুলে প্রথমে গুড়া মশলা নিয়ে কাজ শুরু করি এরপর কসমেটিকস নিয়ে কাজ করি এবং সর্বশেষ ইমিটেশনের গহনা নিয়ে কাজ করে সফলতা অর্জন করেছি। প্রথম দিকে অর্ডার খুবই কম আসতো কিন্তু আমি হাল ছাড়েনি। দিনদিন আমার বিক্রয় বাড়তে থাকে। আজ আমি প্রতি মাসে ভালো আয় করি।
সাতক্ষীরার কামালনগরের সফল নারী উদ্যোক্তা তামান্না তাসলিম বলেন, আমি ২০২০সালে অনলাইনের মাধ্যমে হাতে বানানো গহনা নিয়ে যাত্রা শুরু করি এর পর আমি বিভিন্ন খাবার নিয়ে কাজ করা শুরু করি। যেটা আমার জন্য ছিল খুব চ্যালেঞ্জিং। চাকরির বয়স শেষ তাতে পারিবারিক চাপ হতাশা নিয়ে ভালো কিছুর প্রত্যয়ে ব্যবসা শুরু করি। আমার প্রথম অর্ডার আসে ৩ থেকে ৪ মাস পরে। আর এখন আমার রান্না খাবার সারাদেশে মানুষের কাছে প্রশংসনীয়। আজ আমি নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে অন্যদের কাছে অনুসরণীয।
আব্দুল্লাহ আল মামুন কাজ করেন সুন্দরবনের মধু ও চুই ঝাল নিয়ে। তিনি বলেন শুরুতে অর্ডার পেতে অনেক মাধ্যম ধরা লেগেছে আর এখন অর্ডার নিয়ে পারিনা। কাজে সততা ও নিষ্ঠা থাকলে বহুদূর যেতে কোন বাধা আটকাতে পারেনা।
নারী উদ্যোক্তা কানিজ মাত্র ৫০০টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন আর এখন প্রতি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। সংসার সামলেও ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন এই নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরার একজন পরিচিত মুখ। তার কাছে মিলবে পছন্দ অনুযায়ী ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর কেক, বিভিন্ন রকমের আচার, আমসত্ত্ব, হাতের তৈরি বিভিন্ন জিনিস। খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
ছোট বেলা থেকেই পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করার স্বপ্ন লালন করে বেড়ে ওঠে জাকির। ক্লাস ৫পাশ করেই গ্রাম থেকে শহরে। এর পর এসএসসি, এইসএসসি, অনার্স,মাস্টার্স পাশ করে চাকরি না পেয়ে অনলাইন ব্যবসার সাথে জড়িয়ে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে।
মৌসুমি ব্যবসায়ী শ্যামনগরের মিজান কাজ করেন সাতক্ষীরা ও রাজশাহীর আম নিয়ে। দেশ ও দেশের বাইরে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। সে এবছর শুধু সাতক্ষীরা থেকে ৫০টন আম বিক্রি করেছেন। প্রতি আমের মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা উপার্জন করেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন(বিসিক) সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক গৌরব দাশ বলেন, আমরা বিসিক থেকে প্রতি বছর বেকার নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করতে সাহায্য করি। আমরা প্রশিক্ষণের পরে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করি যেনো তারা সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারে। সাথে আমরা পুজিরও ব্যবস্থা করে দেই। বিগত কয়েক বছরে আমরা কয়েক’শ উদ্যোক্তা তৈরি করতে সফল হয়েছি এবং বেকারত্বের সমস্যা সমাধানে ভুমিকা রেখেছি।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন