প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৫
তথ্য প্রতিবেদক : আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রনে পরিচালিত হচ্ছে খুলনা ওয়াসার সকল প্রকল্প। খুলনা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একান্তভাজন হওয়ায় একের পর এক প্রকল্পগুলোর নিয়ন্ত্রন পেয়েছেন তারা। এদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে পানি সরবারাহ এবং বোতলজাত পানি সরবরাহের মত দুটি বিশাল বাজেটের প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেছে খুলনা ওয়াসা। তবে সেই প্রকল্প দুটির একটিও নগরবাসীর জন্য খুব বেশী সুবিধাজনক হয়নি বলে জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা। আরও একটি বড় বাজেটের প্রকল্পও এরা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এই প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের অনেকেরই সেই প্রকল্পের বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলেও শুধু মাত্র আওয়ামী পরিবারের আস্তাভাজন হিসেবেই তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছে খুলনা ওয়াসার একাধিক সূত্র।
সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরীতে বসবাসকারী প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের জন্য পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও গণমুখী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর আর্থিক সহযোগিতায় খুলনা ওয়াসার আওতায় ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প (জুলাই, ২০১১-জুন, ২০১৯) ২,৫৫৮ (দুই হাজার পাঁচশত আটান্ন) কোটি টাকা ব্যয়ে ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে।
২০১৯ সালের জুন মাসে শেষ হওয়া ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার সেই পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য যাদের নিয়োগ দেয়া হয় তাদের অনেকেরই এই প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিলো না বলে সূত্র জানিয়েছে।
এই প্রকল্পের জন্য ২০১১ সালে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য প্রকল্প পরিচালকের একটি পদের জন্য অভিজ্ঞতা চাওয়া হয় ১৮ বছরের। প্রার্থীর বয়স ধরা হয় অনুর্ধ ৫২ বছর। প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদের জন্য ১২ বছর অভিজ্ঞতা এবং বয়স ৪৬ বছর, নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বয়স ৪০ আর অভিজ্ঞতা ৭ বছর চাওয়া হয়। অন্যান্য পদগুলোতে অভিজ্ঞতা চাওয়া হলেও বছর উল্লেখ করা হয়নি। এই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন মোঃ কামাল হোসেন। তিনি জনস্বাস্থ প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলী ছিলেন। পরবর্তীতে খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। বাকীদের বিষয়ে জানা যায়নি। তবে খুলনা ওয়াসার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পানি সরবরাহ প্রকল্পে যারা নিয়োগ পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তেমন কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না। খুলনার একটি বড় পরিবারের সুপারিশে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রকল্প শেষ হলে এদের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।
খুলনা মহানগরীতে ৭৫ হাজার বাড়িতে সংযোগ দেয়ার কথা থাকলেও একাধিকবার সময় বৃদ্ধি করে ২০১৯ সালের জুনে প্রকল্প সমাপ্ত দেখানো হয় এবং সেই সময়ে মাত্র ৩৮ হাজার বাড়িতে সংযোগ দেয়া হয় বলে জানা যায়। তবে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ৭৫ হাজার কমিয়ে ৪০ হাজার করা হয়। তবে বাকী সংযোগের টাকা ফেরত দেয়া হয়নি বলেও সূত্র জানায়। এমনকি কোন মিটার সংযোগ ওই প্রকল্প থেকে দেয়া হয়নি। প্রকল্প শেষ হলে খুলনা ওয়াসার অর্থের মাধ্যমে মিটার সংযোগ দেয়া হয়। যার জন্য ওয়াসাকে গুণতে হয় ৭৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা, এমনকি উপসহকারীদের বিল এখনও বকেয়া রয়েছে। যার পরিমান এক কোটি টাকার বেশী। এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ছিলেন বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান সেলিম আহমদ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন মোঃ কামাল হোসেন।
পানি সরবরাহ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে এই প্রকল্পে কর্মরতদের খুলনা ওয়াসায় স্থায়ী নিয়োগ দেয়ার জন্য পূনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে খুলনা ওয়াসার তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। ৩১ আগষ্ট ২০২০ সালে তারিখের সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর বয়স নির্ধারণ করা হয় অনুর্ধ ৪৫ বছর, আর নির্বাহী প্রকৌশলীর জন্য বয়স ধরা হয় ৪০ বছর।
প্রথম বিজ্ঞপ্তির নয় বছর পরও বয়স নিয়ে করা হয় লুকোচুরি। যা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
২০১৭ সালে ১৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রাণী সম্পদমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এই প্রকেল্পর প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের এক পত্রে উল্লেখ করেন, নিয়োগপ্রাপ্তদের রাজনৈতিক পরিচয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের পর কোন প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়টি ডিপিপিতে অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সুপারিশ ছিলে না। ফলে তাদের রাজস্বখাতে অন্তর্ভূক্তির জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী সেই সম্মতি পত্রে স্বাক্ষর করেন।
তবে পরবর্তীতে তা সংশোধন করা হয় বলে জানিয়েছেন খুলনা ওয়াসার বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান সেলিম আহম্মদ। তিনি বলেন, আমাদের বিষয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত যে কথা বলা হয়েছে, কোনভাবেই ঠিক নয়।