প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২২
সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের দ্বিতীয় জানাজা শেষে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে সহধর্মিণীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে শনিবার (১৯ মার্চ) দুপুর ২টায় নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় নিজ গ্রাম পেময়ীতে সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রোববার (২০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা।
সেখানে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় মরদেহ। এরপর সহধর্মিণী আনোয়ারা আহমদের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
রোববার (২০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত জানাজার নামাজে ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম আবু সালেহ মো. সলিমউল্লাহ।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতির কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের জানাজার নামাজে বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
এসময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও সাহাবুদ্দীন আহমদের ছেলে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনায় সবার কাছে দোয়া চান। জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
গতকাল শনিবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সাহাবুদ্দিন আহমদ মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছিল।
গতকাল শনিবার বিকেলে জন্মভিটা নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকূড়া ইউনিয়নের পেইম গ্রামে সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও দেশের কৃতিমান এ ব্যক্তিত্বকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান সব শ্রেণিপেশার মানুষ।
২০১৮ সালে ৮০ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে সাহাবুদ্দিন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ মারা যান। এ দম্পতির ৫ সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ড. সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাদের দুই ছেলে দেশেই থাকেন। দুই মেয়ের একজন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যজন থাকেন যুক্তরাজ্যে।
১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি রাষ্ট্রপতি হন।
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার পেমল গ্রামে জন্ম সাহাবুদ্দীন আহমদের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক করেন। ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন।
ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও এরপর প্রশাসক হিসেবে গোপালগঞ্জ ও নাটোর মহকুমায় চাকরি করেন। ১৯৬০ সালে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং পরে কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দীন আহমদ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৬৭ সালে। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি হন। ১৯৮১ সালের ১৬ এপ্রিল আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।